মরক্কোর রূপকথা নাকি ফ্রান্সে স্বপ্ন জয়

দুই দলের ১ম অফিসিয়াল দেখা ১৯৮৮ সালে। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ফরাসিরা

Dec 14, 2022 - 18:04
Dec 14, 2022 - 18:47
 0
মরক্কোর  রূপকথা নাকি  ফ্রান্সে স্বপ্ন জয়
১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালের ব্রাজিলের পর টানা দ্বিতীয় শিরোপার টার্গেটে অসাধারণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিতে ঠাঁই করে নেওয়া ফ্রান্স : সংগ্রহীত ছবি

আফ্রিকার হয়ে নব ইতিহাস সৃষ্টিকারী মরক্কো বিশ্বকাপে তাদের জাদুকরী পারফরমেন্স অব্যাহত রেখেছে। উত্তর আফ্রিকার এ আরব দেশটির সাফল্য অভাবনীয়। যা কেউ কল্পনা করেনি তা করে দেখিয়েছে মরক্কো। অন্যদিকে, প্রচলিত কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রুফ দিচ্ছে ফ্রান্সও। বিশ্বকাপ ট্রফি ধরে রাখার পথে দারুণ সুরে আছে দেশটি। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের। আজ মরক্কোর ইতিহাস নাকি চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের আরেকবার ফাইনাল?

বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) আল বাইত স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়।

আরও পড়ুন : মেসি-আলভারেজের ফেয়ারিটেল, ক্রোটদের ৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

                     গ্যালারিতে বসে আর্জেন্টিনার গোল উপভোগ করছে ব্রাজিলের রোনালদিনহো


কোনো আরব রাষ্ট্র কিংবা আফ্রিকান দেশ প্রথমে কখনো বিশ্বকাপ সেমিতে ওঠেনি। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এটি সেরা সেরা গল্প, যাহার উপসংহার এখনই টানার সময় আসেনি বলা হয়ে থাকে মনে করেন মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই। তিনি বলেন, আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি কিনা? তখন আমার উত্তর, কি জন্য নয়? আমরা স্বপ্ন দেখি, আর স্বপ্ন দেখতে তো আপনার কোনো খরচও হবে না। ইউরোপীয় দলগুলোই সচরাচর বিশ্বকাপ বিজয় করে। আমরা এরই ভিতরে ডগা দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলেছি। আমাদের পথটা সহজও ছিল না। তা সত্ত্বেও বর্তমান যেকোনো দলই আমাদের বিরুদ্ধে খেলতে ভয় পায়। 

চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিক পারফরমেন্স শো করে চলা এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানদের এজন্য সেমিফাইনালে উঠে আসাটা প্রত্যাশিতই। কিন্তু ফাইনালে ওঠার যুদ্ধে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে মরক্কো উঠে আসবে এইরকম ভাবনা হয়তো কারোরই ছিল না। 

কিন্তু একের পর এক চমক আর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান পারফরমেন্স প্রদর্শন করে আফ্রিকান দল সেই অসাধ্য সাধন করেছে। একের পর এক অবাক দেখানো আর অঘটনের উদ্ভব দেয়া মরক্কোর চ্যালেঞ্জ  ফাইনালের টিকিট পাওয়া। এই স্বপ্ন সফল করতে হলে হাকিমি, ইউসেফদের এইরকম একবার খেলতে হবে মুগ্ধতা ছড়ানো ফুটবল। 

মরক্কোর মূল শক্তি তাদের রক্ষণের বোঝাপাড়া। তাদের পরিকল্পনা মাঠে কাজে লাগানোর জন্য মানসিক সচ্ছলতা। রক্ষণের চেয়ে অবশ্য ফ্রান্সের মিডফিল্ড নিষ্ক্রিয় করে রাখার জন্য সোফিয়ান আমরাবাতের দিকে তাকিয়ে থাকবে মরক্কো। মুলত গ্রিজমানকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে এইরকম একদিন আমরাবাতের জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। সেই সাথে গোলকিপার ইয়াসিন বোনোর দারুণ ফর্মটাও তাদের মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে। মরক্কোর গোলবারের প্রহরীকে ফাঁকি দিতে ফ্রান্সকে হয়তো বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে।

ফ্রান্সের মুল শক্তি তাদের আক্রমণভাগ। এমবাপ্পে আর ডেম্বেলেকে সামলাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে দলগুলো তার মাঝেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন গ্রিজমান ও জিরু। জিরু সাধারণত ফ্রান্স দলে সহযোগী স্ট্রাইকার যেভাবে খেলে সেভাবেই খেলে থাকেন। বয়স হওয়ার কারণে রক্ষণ রেখার পেছন দিয়ে ক্ষিপ্র দৌড় দ্বারা ডিফেন্ডারদের টেনে নিয়ে যাওয়া বা মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে রক্ষণের রেখাটা আসক্তিহীন করে দেওয়ার তেমন চেষ্টা করেন না। কিন্তু কোন ডিফেন্ডারের গায়ে গা লাগিয়ে বলকে আগলে রাখতে এখনও নিপুণ তিনি।

ফ্রান্সের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন হাকিম জিয়েশ এবং আশরাফ হাকিমি। দুজনই ডান প্রান্ত দিয়ে হুট করে আক্রমণে যেতে দারুণ পারদর্শী।

দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে আছে ফ্রান্স। সবশেষ সাক্ষাৎ হয়েছে সেই ১৫ বছর প্রথমে ২০০৭ সালে। প্যারিসের ওই স্নেহ ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। বিশ্বকাপে আজ রাতেই ১ম দেখা হলো তাদের। সবমিলিয়ে ইদানিং পর্যন্ত দুই দল সাতবার সম্মুখীন হয়েছে। এর ভিতরে ফ্রান্সের বিজয় তিনটিতে। অবশিষ্ট চার ম্যাচ ড্র হয়। অর্থাৎ একবারও ফরাসিদের হারাতে পারেনি মরক্কো। দুই দলের ১ম অফিসিয়াল দেখা ১৯৮৮ সালে।

ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ফরাসিরা। কিন্তু এ ম্যাচের আগে আরও দুইবার আন-অফিসিয়াল ম্যাচ খেলেছে দুদল। দুটি ম্যাচই থাকে অমীমাংসিত। মরক্কোর বিরুদ্ধে অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা বিশ্বকাপেও ধরে রাখার জন্য চায় কোচ দিদিয়ের দেশমের দল। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর ১ম চ্যাম্পিয়ন টিম হিসেবে সেমিফাইনালে খেলতে যাচ্ছে ফ্রান্স। ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর ১ম দল হিসেবে টানা দুই আসরে ফাইনালে খেলার হাতছানি তাদের সামনে।

১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালের ব্রাজিলের পর টানা দ্বিতীয় শিরোপার টার্গেটে অসাধারণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিতে ঠাঁই করে নেওয়া ফ্রান্স। ফ্রান্সের বর্তমান বিশ্বকাপ রেকর্ডও অতি মজবুত। সমাপ্ত ছয়টিতে তারা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আরও ১টি ফাইনালে অপেক্ষায়।

মরক্কোও পিছিয়ে নাই একেবারেই। এখন পর্যন্ত মরক্কোর জালে কোনও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় বল পাঠাতে পারেনি, যেই ১টি গোল মরক্কোর নামের অপরদিকে আছে সেটাও এসেছিল নিজেদের পা থেকে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow