ক্রিসমাসের অন্যতম আকর্ষণ

এই উৎসব মূলত যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসাবে পালন করা হয়। এদিন কেকে কাটা হয়, আলো দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে চারদিক সুন্দর করে সাজানো হয় সব মিলিয়ে একটা সাজ সাজ রব

Dec 25, 2022 - 12:25
 0
ক্রিসমাসের  অন্যতম আকর্ষণ
অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ হিসাবে ধরা হয়।

এই উৎসব মূলত যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসাবে পালন করা হয়। এদিন কেকে কাটা হয়, আলো দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে চারদিক সুন্দর করে সাজানো হয় সব মিলিয়ে একটা সাজ সাজ রব। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এ তারিখের সঠিক নয় মাস প্রথমে মেরির গর্ভে আসেন  যিশু।  সম্ভবত, এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ হিসাবে ধরা হয়। উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, গির্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন উৎসব উদযাপনের উত্তম অঙ্গ

আরও পড়ুনঃ আজ বড় দিন : ২৫ ডিসেম্বরেই কেন বড়দিন পালন করেন ? জানুন

       

সান্তা ক্লজ 


আর এ ক্রিসমাসের এই অন্যতম আকর্ষণ হল লাল পোশাক, লাল টুপি পরা সাদা ধবধবে দাড়ি-ভ্রু-ওয়ালা সান্তা ক্লজ। তবুও কি জানেন , কে এই সান্তা ক্লজ ? সান্তা ক্লজের উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টীয় ৩ শতকে সেন্ট নিকোলাস নামে এক সন্ন্যাসীকে কেন্দ্র করে । ২৮০ নাগাদ এশিয়া মাইন যা, আজকাল তুরস্কের পাতারা-এ তাঁর উদ্ভব হয়েছিল বলা হয় মনে করা হয়। তাঁর অসম্ভব সততা ও দয়াশীলতার জন্য তাঁকে সবাই ভীষণ পছন্দ করত। ব্যাপক সম্পদের অধিকারী এ মানুষ সবসময় গরিব ও দীন মানুষদের সহযোগিতা করতেন।

শোনা যায়, তিনি একবার ৩টি মেয়েকে অনুগত পরিমাণে  বিক্রি হওয়ার হাত হতে রক্ষা করেছিলেন এবং তাদের বিয়ের যাবতীয় খরচা বহন করেছিলেন। সেন্ট নিকোলাসের এইরূপ দানশীল-উদার মনোভাবের সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে উনি মানুষের রক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। রেনেসাঁ পর্যন্ত ইউরোপে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন সেন্ট নিকোলাস উপনাম “সান্তা ক্লজ” ।

ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে সিন্টার  (সেন্টনিকোলাসের সংক্ষিপ্ত রূপ) নামে ডাকা হতো। এই সিন্টার ক্লাস থেকেই  উত্‍পত্তি হয়েছে সান্তা ক্লজ নামটির। ক্রিসমাসে বিশেষ করে কচিকাচাদেরকে উপহার দেওয়ার আইন শুরু হয় উনিশশো শতকের গোড়ার দিক থেকে। ১৮২০ সাল থেকে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দোকানে দেওয়া হত বিজ্ঞাপন, পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হত যেখানে সান্তা ক্লজের ছবিও ছাপা হতো। ১৮৪১ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি দোকানে ১টি মানুষরূপী সান্তা ক্লজ প্রস্তুত করা হয় যা দেখতে ভিড়  জমিয়েছিল প্রায় কয়েক হাজার শিশু। আর অতঃপর থেকেই ছোট্ট শিশু এবং তাদের বাবা-মায়েদের মুগ্ধ করতে দোকানে দোকানে জীবন্ত সান্তা ক্লজ  হয়।


প্রসঙ্গত, আজকের সান্তা ক্লজের যে রূপ চোখে পড়ে, তা কিন্তু এসেছে,” An Account of a Visit from St. Nicholas”- শীর্ষক ১টি ছড়া থেকে। ১৮২২ সালে “ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর” নামে একজন ক্রিসমাস  উপলক্ষ্যে এ কবিতাটি লেখেন। লাল পোশাক, কালো বেল্ট  বর্ডার দেওয়া লাল টুপি পরা ধলা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি ৮টি হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে উড়ে উড়ে ছোটদের বাড়ি গিয়ে উপহার বিতরণ করছে- এমনই এক চিত্র ফুটে উঠেছিল তার সেই কবিতায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ কবিতা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

তবে সান্তা ক্লজের কাছ থেকে শুধু গিফ্ট পাওয়াই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় শিশুরা সান্তার জন্যে এক গ্লাস দুধ এবং প্লেটে বিস্কুট সাজিয়ে আলাদা করে রেখে দেয়। ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় সান্তা ক্লজকে দেওয়া হয় বিয়ার কিংবা মিষ্টি পিঠে। ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং সুইডেনে দেওয়া হয় পায়েস ও দারুচিনি। আয়ারল্যান্ডে সান্তার জন্যে রাখা হয় ক্রিসমাসের বিশেষ পুডিং ও দুধ। এইভাবে সারা পৃথিবী জুড়ে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন আলো, রংবেরঙের উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ক্রিসমাস উৎসব।

ক্রিসমাস ট্রি


ক্রিসমাস ট্রি  বড়দিনের একটি বিশেষ অঙ্গ, এ গাছেই বিভিন্ন রংয়ের  সজ্জা আর নানারকম দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হয়ে যায় ক্রিসমাস ট্রি সাজানো বড়দিনের একটি বিশেষ অঙ্গ। মোমবাতি, পাখি, ফুল, ফল, স্বর্গদূত আর রঙবেরঙের কাগজ এবং লাইট দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি  হয়।


ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে যে গাছটি সবচেয়ে অধিক ব্যবহার করা হয় সেটি হল ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এ গাছেই নানারকম রংয়ের আলোক সজ্জা আর বিভিন্ন দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হয়। ক্রিসমাস ট্রি’তে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এ গাছের ওপরে ১টি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক। বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো ও পুরস্কার দেওয়ার আরম্ভ কীভাবে হয় তার লিখিত কোনো কাগজপত্র নেই। এই নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন গল্প। 

এমন একটি ছোট-গল্প হলো রোমের এক গরিব কাঠুরের কক্ষে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হল। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে খাতির করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই বাচ্চা দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’।  তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে উনি ১টি বৃক্ষের ডাল দিলেন ও তা মাটিতে পুঁতে রাখার জন্য বললেন। অতঃপর ক্রিসমাসের দিন লক্ষ্য গেল ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এই গাছের নাম দেন ক্রিসমাস ট্রি। 

একদিন এক গরিব ছোট বাচ্চা কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেওয়ার অনুরোধ করল এক গির্জার মালিকে। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল।  ক্রিসমাসের দিন ঘুম হতে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে ও সেগুলো হতে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ক্রিসমাস ট্রি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow