‘স্যামুয়েল মোর্স’ এক তারবিশিষ্ট টেলিগ্রাফের উদ্ভাবক

একজন আমেরিকান উদ্ভাবক ও চিত্রশিল্পী স্যামুয়েল এফবি মোর্স । প্রথম জীবনে চিত্রশিল্পী হিসেবে সুনাম লাভের পর তিনি ইউরোপীয় টেলিগ্রাফব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এক-তার বিশিষ্ট টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন। মোর্স কোডের উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রাখেন। তার হাত ধরেই টেলিগ্রাফ ব্যবহারের প্রসার ঘটে।

Feb 7, 2023 - 20:04
 0
‘স্যামুয়েল মোর্স’  এক তারবিশিষ্ট টেলিগ্রাফের উদ্ভাবক
সংগ্রহীত ছবি

একজন আমেরিকান উদ্ভাবক ও চিত্রশিল্পী স্যামুয়েল এফবি মোর্স । প্রথম জীবনে চিত্রশিল্পী হিসেবে সুনাম লাভের পর তিনি ইউরোপীয় টেলিগ্রাফব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এক-তার বিশিষ্ট টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন। মোর্স কোডের উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রাখেন। তার হাত ধরেই টেলিগ্রাফ ব্যবহারের প্রসার ঘটে।

১৮৩০ সাল থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে স্যামুয়েল মোর্স (১৭৯১-১৮৭২) ও অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ টেলিগ্রাফ প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন।  ১৮৪৪ সলে স্যামুয়েল মোর্স সর্বপ্রথম টেলিগ্রাফের সাহায্যে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বাল্টিমোর,মেল্যান্ডে টেলিগ্রাফ বার্তা পাঠান। ১৮৬৬ সালের মধ্যেই আমেরিকা, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল হতে শুরু করে সমগ্র ইউরোপে টেলিগ্রাফের লাইন বসানো হয়। যদিও একাবিংশ শতাব্দীর শুরুতে টেলিফোন, ফ্যাক্স মেশিন ও ইন্টারনেটের কারণে টেলিগ্রাফের ব্যবহার কমতে থাকে তবুও টেলিগ্রাফকেই এসকল পরবর্তীকালের আবিষ্কারের বীজ হিসেবে বিবেচিত। এর আবিষ্কার বিশ্ব ইতিহাসে এক মাইলফলক হিসেবে পরিচিত। স্যামুয়েল মোর্স ১৮৭২ সালের ২ এপ্রিল নিউইয়র্ক শহরে মৃত্যুবরণ করেন।


তবে মোর্স ১০০ গজের অধিক দূরত্বে টেলিগ্রাফিক সংকেত প্রেরণে সমস্যার সম্মুখীন হন। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক লিওনার্দ গ্যালের সাহায্যে তিনি অতিরিক্ত বর্তনী বা রিলে যুক্ত করে ১০ মাইল বা ১৬ কিলোমিটার দূরত্বেও বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন।


১৮৪৩ সালে মোর্স এ ভ্যালি আমেরিকান কংগ্রেস থেকে প্রথম আর্থিক সহায়তা পান ওয়াশিংটন ডিসি হতে ম্যারিল্যান্ড পর্যন্ত দূরত্বে টেলিগ্রাফ পরীক্ষার জন্য। ১৮৪৪ সালের ২৪ মে সর্বপ্রথম মোর্স ভ্যালিকে প্রথম সফল টেলিগ্রাফ বার্তা প্রদান করেন যা ছিল “হোয়াট হেথ গড রট’!”। এরপর অতিদ্রুত এই টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা আমেরিকাসহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি এ ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি আসতে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হল নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও উন্নত ইনস্যুলেশন তারের উদ্ভাবক এরজা কর্ণেল। টমাস আলভা এডিসন কর্তৃক কোয়াড্রুপ্লেক্স ব্যবস্থার উদ্ভাবন যাতে একইসঙ্গে ৪ টি বার্তাকে একটি তারের সাহায্যে ট্রান্সমিট করা যায়।


বিংশ শতাব্দীতে এসে তড়িৎ বিজ্ঞানের দুইটি আবিষ্কার টেলিগ্রাফ আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করে।একটি হলো ১৮০০ সালে ইতালিয়ান পদার্থবিদ আলেসান্দ্রো ভোল্টার ব্যাটারি আবিষ্কার।যা পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুতকে একটি নির্দিষ্ট কোষে আবদ্ধ রাখতে সক্ষম ছিল।অন্যটি হলো ১৮২০ সালে ডেনিশ বিজ্ঞানী হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেডের তড়িৎ ও চৌম্বকীয় শক্তির মাঝে সম্পর্ক স্থাপন।পৃথিবীব্যাপী যেসব বিজ্ঞানী এসময় এসকল জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যোগাযোগের ও ভাবের আদান প্রদানে সক্ষম প্রযুক্তি তৈরীতে কাজ করেন তাদের টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের ক্রেডিট যে দুই দল বিজ্ঞানীর উপর পরে তার হলেনঃ ইংল্যান্ডের স্যার উইলিয়াম কুক (১৮০৬-১৮৭৯) ও স্যার চার্লস হুইটস্টোন(১৮০২-১৮৭৫) ও যুক্তরাষ্ট্রের স্যামুয়েল মোর্স, লিওনার্দ গ্যালে (১৮০০-১৮৮৩) ও আলফ্রেড ভ্যালি (১৮০৭-৫৯)।


১৮৩০ সালে স্যার উইলিয়াম কুক ও চার্লস হুইটস্টোনের বৈজ্ঞানিক দল একটি টেলিগ্রাফ সিস্টেমের উদ্ভাবণ করে যেখানে ৫টি চৌম্বকীয় সূঁচকে একটি বহু বর্ণ ও সংখ্যাযুক্ত প্যানেলে তড়িৎ শক্তির সাহায্যে পয়েন্টেড করে রখা হতো। অতিদ্রুত ইংল্যান্ডের রেলস্টেশনগুলোতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়। একই সময়ে আমেরিকার ম্যাসেচুসেটসে জন্মগ্রহণকারী ও ইয়েল থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করা স্যামুয়েল মোর্স নিজেই একটি আলাদা টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা তৈরীতে মনোনিবেশ করেন। মোর্স তার ক্যারিয়ার শুরু করেন একজন প্রিন্টার হিসেবে। ১৮৩০ সালে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় যাওয়ার সময় তিনি টেলিগ্রাফ ও তড়িৎ চৌম্বকীয় শক্তি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং পরবর্তীতে আমেরিকান পদার্থবিদ জোসেফ হেনরির কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান লাভ করেন। গ্যালে ও ভ্যালির সঙ্গে একত্রে মোর্স একটি সিঙ্গেল সার্কিট টেলিগ্রাফ যন্ত্রের উদ্ভাবন করেন। যাতে একটি সুইচ থাকে এবং সেটি চাপ দিয়ে তড়িৎ বর্তনীতে সংযুক্ত করে বর্তনী পূর্ণ করা হত। এতে করে একটি তড়িৎ প্রবাহ যন্ত্রের একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে গিয়ে পৌঁছে যা একটি তড়িৎ সিগন্যাল বহন করে। আর এর জন্য শুধুমাত্র একটি সুইচ, ব্যাটারি ও দুই প্রান্তে সংযোগ স্থাপনের জন্য তারের প্রয়োজন হত।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow