মোবাইল ফোনের বাজারে চীনকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় ভারত
ভারতের মোবাইল ফোনের বাজারে অনেক দিন ধরেই আধিপত্য করছে চীনে তৈরি ফোন। তবে এখন চীনের এই বাজারে দাঁত বসাতে চাইছে ভারতীয় মোবাইল ফোন-নির্মাতারা। তবে ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয় তার ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি হচ্ছে চীনা। তাই তাদের চ্যালেঞ্জ করতে হলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে অনেক দূর যেতে হবে। তবে ভারতীয় কোম্পানিগুলো আশা করে তারা এক সময় তাদের নিজ দেশেই বিশ্বমানের মোবাইল ফোন শিল্প গড়ে তুলতে পারবে।
এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২২ সালে ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে তার ৬০ শতাংশই চীনে তৈরি। কিন্তু এ সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় চার শতাংশ কম। দু’হাজার একুশ সালে ভারতে বিক্রি হওয়া চীনা ফোনের পরিমাণ ছিল ৬৪ শতাংশ। এর কারণ হলো, ভারতীয় মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাজারে দাঁত বসাতে শুরু করেছে।
ভারতের বাজারে চীনা ফোনের আধিপত্যকে যারা চ্যালেঞ্জ করছে, তাদের একটি কোম্পানি হচ্ছে মাইক্রোম্যাক্স ইনফরমেটিক্স। তারা মোবাইল ফোনের বাজারে ঢুকেছে ২০০৮ সালে। কিন্তু দুই বছরের মধ্যেই তারা ভারতের অন্যতম বৃহৎ সস্তা ফোন-নির্মাতায় পরিণত হয়-যাকে বলা হচ্ছে ‘ফিচার’ ফোন। তবে মাইক্রোম্যাক্সের এই বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও এর সহপ্রতিষ্ঠাতা রাজেশ আগরওয়াল স্বীকার করছেন, চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা খুব কঠিন।
আগরওয়াল বলছেন, তার কোম্পানি যখন একটা নতুন ফোন বাজারে ছাড়ে তখন তাদের আশা থাকে যে এটা মোটামুটি ১০ লাখ ইউনিট বিক্রি হবে। কিন্তু একটি চীনা কোম্পানি বিক্রি করে তার ১০ গুণ, এক কোটি বা তারও বেশি ফোন। ফলে তারা একেকটি ফোনের দাম অনেক সস্তা রাখতে পারে।
আরও পড়ুনঃ দাম বেড়েছে আদা ও ডিমের দাম, স্বস্তি নেই চালেও
আগরওয়াল আরো বলছেন, চীনা কোম্পানিগুলো উৎপাদন ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী এবং তারা তাদের ফোনের প্রায় সব যন্ত্রাংশই স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারে।
সমস্যা হলো, ভারতে মোবাইল ফোনে চার্জার, কেবল বা ব্যাটারির মত কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি হয় বটে কিন্তু কম্পিউটার চিপস বা স্ক্রিনের মত জটিল যন্ত্রাংশগুলো প্রায় সবই তৈরি হয় বিদেশে। ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে এটা সবে শুরু মাত্র-আগরওয়াল বলছেন, ভারতকে মোবাইল ফোনের সব যন্ত্রাংশই নিজ দেশে তৈরি করতে হবে।
তিনি আরো বলছেন, শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোই যে লক্ষ্য হতে হবে তা নয়, বরং ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের মত ডিভাইসগুলোর বিশ্ববাজারেও প্রবেশ করতে হবে।
এরকম ভাবনা থেকে ভারতের সরকারও একটা উদ্যোগ নেয় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে। প্রোডাকশন লিংকড ইনসেন্টিভ বা পিএলআই নামে একটি স্কিম হাতে নেওয়া হয়েছে যার লক্ষ্য ভারতে সবরকম ম্যানফ্যাকচারিং বাড়ানো, আর তার অংশ হিসেবে টেলিকম ও নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি তৈরি করা। মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হলে তাদের ভর্তুকিও দিচ্ছে এই পিএলআই। বর্তমানে একটা ভারতীয় মোবাইল ফোনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হচ্ছে। পিএলআইয়ের লক্ষ্য এই অনুপাত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। ভারতের সেলুলার এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স সমিতি আইসিইএ’র চেয়ারম্যান পংকজ মহিন্দ্রু বলছেন, ভারতে মোবাইল ফোন ম্যানফ্যাকচারিং এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে, এবং তারা এখনই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্যান্ডস্টে প্রস্তুতকারকে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মার্চ-এপ্রিলের দিকে উদ্বোধন হতে পারে বঙ্গবন্ধু টানেল
ভারতের একটি মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি লাভা ইন্টারন্যাশনাল। এর চেয়ারম্যান হরি ওম রাই বলছেন, ভারত আগামীতে ফোন উৎপাদনের বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। কারণ তার কথায়, চীন ক্রমশঃ ধনী হচ্ছে, বেতন বাড়ছে ফলে দামের ক্ষেত্রে তাদের যে সুবিধা তা তারা হারিয়ে ফেলছে। তা ছাড়া বিশ্বের কিছু বড় বড় ফার্ম চীনা পণ্যের ওপর বেশি নির্ভরশীল হবার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে, বলছেন মি. রাই। তার কথায়, এসব ফার্ম যদি অন্য কোন দেশে চলে যেতে চায় তাহলে ভারতই হবে আকর্ষণীয় বিকল্প। অবশ্য মুম্বাইয়ের দীপা আসওয়ানি এসব নিয়ে ভাবিত নন। তার কথা ‘আমার স্মর্টফোন কোথায় তৈরি হলো না-হলো এ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি একজন ক্রেতা। আমার কাছে ফোনের ফিচার আর তার দাম। এ দুটোই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বলেন তিনি।
What's Your Reaction?