পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সৌদিতে, অর্থনৈতিক সংকট কাটবে?

অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তান। আর এর মধ্যেই সৌদি আরব সফরে গেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর উপসাগরীয় এ দেশটিতে পাক সেনাপ্রধানের এটিই ১ম সফর।

Jan 8, 2023 - 14:48
 0
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সৌদিতে, অর্থনৈতিক সংকট কাটবে?

রোববার (৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সফরে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনাও করেছেন জেনারেল আসিম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে গত সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির। সৌদি আরব বরাবরই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক মিত্র এবং নিজের প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়ে পাকিস্তানি এ জেনারেল তার পূর্বসূরিদের পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন।

প্রায় এক সপ্তাহের এ সফরে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কানেক্ট আরব আমিরাতও (ইউএই) যাবেন।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘পারস্পরিক স্বার্থ, সামরিক সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করতে সিওএএস উভয় ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সিনিয়র নেতৃত্বের সাথে নোটিশ করবেন।’

সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, জেনারেল মুনির বৃহস্পতিবার রাজধানী রিয়াদে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজের সাথে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ সৌদি আরবে নুরকে ‘মারধর’, ভিডিও ভাইরাল

যুবরাজ খালিদ বিন সালমান টুইট করেছেন, ‘আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর জোর দিয়েছি, দ্বিপাক্ষিক সামরিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছি এবং আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।’

‘ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনৈতিক অবস্থা’
আল জাজিরা বলছে, সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সৌদি সফর এইরকম এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন পাকিস্তান ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক রিজার্ভ ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও নিচে নেমে গেছে, যা ২০১৪ বছরের এপ্রিলের পর থেকে সর্বনিম্ন।

এই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কর্তৃক কেবলমাত্র এক মাসের আমদানি  কভার করা সম্ভব। এছাড়াও দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়েছে। অন্যদিকে গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি বিপর্যয়কর বন্যার মোকাবিলা করছে যাহার ফলে ইসলামাবাদের আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

গত সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এক খোজ-খবর সম্মেলনে প্রার্থনা পাবলিশ করেন, রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি দিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আমানত রাখবে সৌদি আরব।

বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়াতে এবং দেউলিয়া হওয়া থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামাবাদের সৌদি ধনের প্রয়োজন ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মেয়াদে রিয়াদ ২০২১ বর্ষের নভেম্বরে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা করেছিল। গত মাসে সৌদি সেই তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধি করে।

এছাড়া গত বর্ষের এপ্রিলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অর্থনৈতিক সহায়তা এবং বিনিয়োগের জন্য উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। গত বর্ষের এপ্রিল হতে নভেম্বরের মধ্যে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব ৯০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার একসাথে তেল আমদানির জন্য পাকিস্তানকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে।

একইসঙ্গে গত বছরের আগস্টে শেহবাজ শরিফের দোহা সফরের সময় কাতার ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের শপথ দিয়েছিল।

ইসলামাবাদ-ভিত্তিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ ফয়সাল বিশ্বাস করেন, জেনারেল মুনিরের সফরকে নিশ্চয়ই অর্থনীতির দৃষ্টি হতে দেখা উচিত, কারণ ‘দুর্বল আর্থিক পরিস্থিতির’ সময়ে এই সফরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের নেতৃত্ব ঋণ খেলাপি এড়াতে ও ক্ষয়িষ্ণু বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য সৌদি রাজপরিবারের দিকে তাকিয়ে আছে। ইসলামাবাদের জন্য, সফরের মূল ফলাফল হবে আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে সৌদি আরবের ঘোষণা।’

পাকিস্তান গত সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) হতে ১.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ নিশ্চিত করতে উপযুক্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও ১.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পরবর্তী ধাপের ঋণ বিলম্বিত হচ্ছে। ইসলামাবাদ এখনও পরবর্তী ধাপের ঋণের জন্য আইএমএফের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  মামলায় লড়বে রোবট আইনজীবী, কমবে খরচ

অবশ্য গত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। সেসময় পাকিস্তানের সরকার জ্বালানির ওপর কর বৃদ্ধিসহ আইএমএফের শর্ত মানতে নারাজ ছিল বলে মনে করা হয়।

আল জাজিরা বলছে, পাকিস্তান খেলাপি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ঠেকেছে। সহজ কথায় সাম্প্রতিক অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি তার পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না এবং এমনকি নিজের ঋণের দায় মেটাতে কোষাগারে পর্যাপ্ত অর্থও নেই।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার মতো খেলাপি পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এবং অর্থনীতিকে কেবল দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার মাধ্যমে দেশটি এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে পারে।

ফয়সাল বলছেন, সৌদি তাদের দৃষ্টিকোণ হতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় কারণ পরমাণু শক্তিধর এ দেশটি সৌদির আঞ্চলিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ফয়সাল আল জাজিরাকে বলছেন, ‘সৌদি আরব জানে যে বৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তান মক্কা ও মদিনায় ইসলামের দু’টি পবিত্র স্থানের  হওয়ার ব্যাপারে সৌদির দাবিকে সমর্থন করে।’ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

আরও পড়ুনঃ করোনায় আরও ৯০১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৪ লাখের নিচে


পাকিস্তান ও সৌদি আরবের ভিতরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গত ৫০ বছরেরও বহু সময়ের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের দিকে তাকালে নোটিশ যায়, কোনও পাকিস্তানি নেতা — বেসামরিক বা সামরিক — দায়িত্ব নেওয়ার পরে সৌদি আরবকে তাদের ১ম গন্তব্য সংখ্যায় বেছে নিয়েছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং তার পূর্বসূরি ইমরান খান উভয়েই যথাক্রমে ২০১৮ ও ২০২২ সালে নিজেদের ১ম সফরে সৌদি আরব ভ্রমণ করেছিলেন।

এছাড়া পাকিস্তানের সর্বশেষ দুই সাবেক সেনাপ্রধান — জেনারেল মুনিরের পূর্বসূরি জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং জেনারেল রাহিল শরিফ তাদের প্রথম সফরেও সৌদি আরব গিয়েছিলেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow