এবার গ্রাহক পর্যায়েও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম

সোমবার (২১ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।

Nov 26, 2022 - 14:06
Dec 13, 2022 - 16:57
 0
এবার গ্রাহক পর্যায়েও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফাইল ছবি

বিদ্যুৎ অগ্রগতি বোর্ডের (পিডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি ডিস্কাউন্ট (বিইআরসি)।

প্রতি কিলোওয়াট ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করিয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কিলোওয়াটে ১ টাকা ৩ পয়সা করে বেড়েছে। শতাংশের হিসাবে ১৯.২২ শতাংশ বেড়েছে। আগামী মাস থেকেই নব এ প্রাইস কার্যকর হবে।

পাইকারি অবস্থায় বিদ্যুতের ভ্যালু ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের প্রাইস ৫ টাকা ১৭ পয়সার স্থলে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ প্রাইস বিবেচনায় নিয়ে অৰ্পণ কোম্পানিগুলো শিগগির কমিশনের কাছে দর বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব দেবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে খুলনা বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সম্প্রদান করা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থা (ওজোপাডিকো) ২০ শতাংশ প্রাইস বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করেছে। যদিও ব্যবহারকারী পর্যায়ে এখনই দর বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলা হয় আশ্বস্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইকারিতে যেহেতু ভ্যালু বেড়েছে সেহেতু খুচরা পর্যায়ে প্রাইস বাড়বে- এটা স্বাভাবিক। অৰ্পণ কোম্পানিগুলো লসে বিক্রি করবে না। হয়তোবা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা শেষ হতে ২-৩ মাস টাইম লাগতে পারে। কিন্তু আর্থিক এ সংকটের মধ্যে এক লাফে ২০ শতাংশ বাড়ানো নির্ভুল হয়নি।

সোমবার ভার্চুয়ালি বার্তা সম্মেলনে বিদ্যুতের পাইকারি ভ্যালু বৃদ্ধির জন্য কথা জানায় কমিশন। খোজ-খবর সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, মেম্বার আবু ফারুক, মেম্বার মকবুল ই ইলাহী, সদস্য বজলুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে পাইকারি অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘গ্রাহক অবস্থায় বিদ্যুতের ভ্যালু বাড়বে কিনা তা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যাচাই-বাছাই করে দেখবে।’

সোমবার সচিবালয়ে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের ভ্যালু বৃদ্ধির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সারা পৃথিবীতেই বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। ইউজার পর্যায়ে এখনই দর বেড়েই চলেছে না। প্রাইস বাড়বে কি না, সেটাও নির্ভর করছে মাঠ পর্যায়ের তথ্যেরভিত্তিতে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই পরের ডিসিশন নেওয়া হবে।’

পাইকারি অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিইআরসি তাদের মতো করে বিচার করেই ডিসিশন নিয়েছে। এর আগে তারা ঘোষণা দিয়েও ভ্যালু বাড়ায়নি। সবকিছু তারা যাচাই-বাছাই করেই করেছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রাহক অবস্থায় কতটুকু ইফেক্টে পড়বে বর্তমান তো বলতে পারছি না। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য চাই। দামের সঙ্গে কিছুটা সমন্বয় করতে চাই। সম্প্রতি যেটা হয়েছে, সেটি হয়তো হবে না। তা সত্ত্বেও ফিউচারে বিইআরসি এটি বাড়ানোর জন্য (গ্রাহক পর্যায়ে) বিচার করবে।’

এদিকে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের প্রাইস বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি ছাড়ে (বিইআরসি) হাজির হয় দান কোম্পানি। গ্রাহকপর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির ১ম প্রস্তাব দেয় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকো)। খুলনা বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলায় তড়িৎ উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠানটি।

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম গ্রাহকপর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘ইতোমধ্যে জমা দেওয়া আবেদনে ২০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত পাইকারি প্রাইস বাড়াতে খুচরা কারেন্ট বিক্রির প্রভাব মীমাংসা করে এই মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

তবে কমিশনের মেম্বার আবু ফারুক এখনও প্রস্তাবটি বিইআরসিতে পৌঁছায়নি বলে জানান।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রচারণা দেওয়ান বলেন, ‘আমরা এখনও আবেদন করিনি। তবুও আপিল করার প্রিপারেশন নিচ্ছি।’

বর্তমান সিচুয়েশনে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তিকতা ঠিক আছে কিনা বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম ঢাকনা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে সবকিছুরই ভ্যালু বেড়েছে, লোক হিমশিম খাচ্ছে। এমন অবস্থায় দর বাড়ানোর জন্য ব্যাপারে আমি বলব- এটা সরকারের ইচ্ছে। সরকার তবুও ভর্তুকি দিচ্ছে এটি ঠিক। চাইলে আরও কয়েকদিন একটু বেশি দেওয়ার জন্য পারত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা প্রশ্ন করতে পারি এটা নিয়ে যে, কেন রাষ্ট্রশাসক গোষ্ঠী কারেন্ট উৎপাদনের জন্য কেবল তেল বা গ্যাসের ওপর আশ্রিত হলো। কিসের জন্য দেশের গ্যাসের উদ্ভাবন বাড়াতে বৃহৎ স্টেপ নেওয়া হয়নি। দেশের গ্যাস  বাড়লে সম্প্রতি এতটা চাপে পড়তে হতো না। বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের ভ্যালু বাড়লে দরকারের জন্য কিনতেই হবে বেশি দামে হলেও। ইদানিং রাষ্ট্রশাসক বিভাগ চাইলে আরেকটু বহু ভর্তুকি দিতে পারে। আবার সমন্বয় করতে চেয়েছে এইজন্য করেছে। এটার যৌক্তিকতা নিয়ে আমার কোনো কথা নেই।’

পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে এখন ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য বাড়বে কিনা প্রশ্নে উনি বলেন, ‘পাইকারিতে যেহেতু মূল্য বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির জন্য অৰ্পণ কোম্পানিগুলো কমিশনের নিকট প্রস্তাব দেবে এটা স্বাভাবিক। হয়তো-বা বা তারা যত টাকা মূল্য বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করবে, ততটুকু না বাড়লেও কিছুটা হলেও দর বাড়বে। মার্কেটিং কোম্পানিগুলো তো আর লসে বিক্রি করবে না। হয়তোবা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা শেষ থেকে ২-৩ মাস টাইম লাগতে পারে।’

ঢাকা ভার্সিটির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম আচ্ছাদন টাইমসকে বলেন, ‘যেহেতু গোটা জগতে সবকিছুর প্রাইস বেড়ে যাচ্ছে সে হিসেবে গভর্নমেন্ট বিদ্যুতের দর যদি কিছুটা বাড়ায়- তা জনগণের সামর্থে্যর ভিতরে থাকতে হবে। সম্প্রতি এক লাফে ২০ শতাংশ বাড়ানো সঠিক হয়নি। এটা ধাপেধাপে বাড়াতে পারত। এর প্রভাব সকল কিছুর ওপরেই পড়বে। আমার নিকট মনে হলো এটি বেশি।’

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই দর বাড়বে। উৎসর্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতো লসে বিক্রি করবে না। এরা প্রস্তাব করবে। সে অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া অধুনা আমাদের সবকিছুর ভ্যালু বাড়ার ভিতরে এক লাফে এতটা বাড়ানো নির্ভুল হয়নি। এর জন্য আনুষাঙ্গিক সবকিছুরই মূল্য বাড়বে।’

এর প্রথমে গত ১৩ অক্টোবর বিদ্যুতের পাইকারি দাম না বৃদ্ধির জন্য ঘোষণা দিলেও সোমবার সেই দামই বাড়ানোর জন্য ঘোষণা দিলো কমিশন। তারও আগে বিগত ১৮ মে কোম্পানিগুলোর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের প্রবর্তিত দামের ওপর গণশুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি ডিস্কাউন্ট (বিইআরসি)। আইন অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কর্মদিবসের ভিতরে আদেশ দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুসারে ওইদিন রেজাল্ট ঘোষণা করা হয়।

গত এক যুগে বিদ্যুতের দর বেড়েছে নয়বার। এ টাইম পাইকারি অবস্থায় ১১৮ শতাংশ এবং ইউজার অবস্থায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ ২০২০ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভিন্ন দফা বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow