মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে "ফ্রান্স "

ম্যাচের তখন মাত্র ৬ মিনিট। ডান দিক হতে আক্রমণে উঠে ডি বক্সে বল বাড়ান অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান

Dec 15, 2022 - 03:41
 0
মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে  "ফ্রান্স "
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে মাঠে নামার আগে কাতার বিশ্বকাপে মাত্র একটি গোল হজম করেছিল মরক্কো

ম্যাচের তখন মাত্র ৬ মিনিট। ডান দিক হতে আক্রমণে উঠে ডি বক্সে বল বাড়ান অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান। কিন্তু ডি বক্সের ভেতর অলিভিয়ের জিরুড এবং কিলিয়ান এমবাপে মরক্কোর রক্ষণের বাধা ভেঙে শট নিতে পারেননি। এমবাপে কোনো রকমে শট নিলে তা মরক্কোর ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বাঁ দিকে থাকা থিও হার্নান্দেজের কাছে যায়। আর দারুণ এক অ্যাক্রোব্যাটিক শটে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন তিনি। আর এতেই প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে শেষ করে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে মাঠে নামার আগে কাতার বিশ্বকাপে মাত্র একটি গোল হজম করেছিল মরক্কো। অবশ্য সেটা কোনো প্রতিপক্ষের শট হতে আসেনি। যে একটি গোল মরক্কোর জালে জড়িয়েছিল সেটা ছিল তাদেরই আত্মঘাতি গোল। তবে সর্বশেষে ফ্রান্স ভাঙল মরক্কো ডেডলক। থিও হার্নান্দেজের অসাধারণ গোলে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টুর্নামেন্টে ১ম গোল হজম করলো আফ্রিকান দেশটি।


আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই গোলের দেখা পায় ফ্রান্স। তবে ম্যাচে গোল হজমের পর হতে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে দারুণ খেলতে থাকে মরক্কো। ১০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ওনাহি। কিন্তু তা দারুণ সেভে দলকে রক্ষা করেন হুগো লরিস। এরপর আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দু'দল। ম্যাচের ১৫ মিনিটে ডান দিক থেকে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। তবে  হতে বিপদ ঘটাতে পারেনি মরক্কো।

আরও পড়ুন : মরক্কোর রূপকথা নাকি ফ্রান্সে স্বপ্ন জয়

                     ঈশ্বর তোমাকে মুকুট দেবেন, মেসিকে এমন বার্তা : রিভালদো

পরের মিনিটেই বাউফলের কাছ থেকে ডি বক্সের ভেতর অসাধারণ এক বল পান হাকিম জিয়েচ কিন্তু ওখান হতে ফ্রান্সের ডিফেন্স থাকে শট নিতে দেয়নি। ডি বক্সের ভিতরের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে প্রতি আক্রমণে ওঠে ফ্রান্স। আর ওখান হতে অসাধারণ এক আক্রমণে বল পেয়ে মরক্কোর ডি বক্সে ঢুকে জোরালো শট নেন অলিভিয়ের জিরুড। কিন্তু তার শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে প্রকৃতপক্ষে লিড বাড়ানো হয়নি ফ্রেঞ্চদের।

প্রথমার্ধের সময় যত গড়াচ্ছিল ততই আক্রমণের গতি বাড়ছিল মরক্কোর। একের পর এক দারুণ  সুযোগ প্রস্তুত করছিল আফ্রিকান দলটি। এদিকে ছেড়ে কথা বলছিল না ফ্রান্সও। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে কর্নার পায় ফ্রান্স। কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে শট করেন ইউসুফ ফোফানা। কিন্তু তা চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে গোলের সরল সুযোগ নষ্ট করেন জিরুড। ডি বক্সের ভেতর বল পেয়েও জালে বল জড়াতে ব্যর্থ হন তিনি।

৪০তম মিনিটে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েন তা সত্ত্বেও কর্নারের বিনিময়ে আক্রমণ থামায় মরক্কোর ডিফেন্স। এরপর কর্নার হতে নিচু করে বাড়ানো বল পেয়ে যান ভারান কিন্তু তার লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে লিড বাড়েনি ফ্রান্সের। পরবর্তী সময়টুকু মরক্কো একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। ৪৪ মিনিটে কর্নার পায় মরক্কো। কর্নার হতে বল পেয়ে বাইসাইকেল কিক করেন জাওয়াদ এল ইয়ামিক। কিন্তু তা পোস্টে লেগে প্রতিহিত হয়। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে এক গোলে এগিয়ে হতে প্রথমার্ধ শেষ করে ফ্রান্স।


বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই অন্য এক মরক্কোর দেখা মেলে। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণকে এক বিন্দু দম ফেলারও চান্স দিচ্ছিল না আফ্রিকান সিংহরা। কিন্তু কিছুতেই ফ্রেঞ্চ রক্ষণদূর্গ টলাতে পারেনি। একের পর এক সকল আক্রমণে রুখেছে কুন্দে-ভারান-কোনাতে-হার্নান্দেজকে নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ। কিন্তু প্রতি আক্রমণে মরক্কোর ভালোই পরীক্ষা নিচ্ছিল এমবাপেরা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে ক্রস করেন এমবাপে। কিন্তু তাতে কেউ মাথা ছোঁয়াতে না পারায় ব্যবধান বাড়ানো হয় না ফ্রান্সের। ম্যাচের ৫১ মিনিটে বল নিয়ে এমবাপে এগিয়ে যায়। কিন্তু দারুণ ট্যাকেলে তা বিপদ মুক্ত করেন সোফিয়ানে আমরাবাত।

এরপর ঘুরে যায় আক্রমণের পাল্লা। ৫৩তম মিনিটে ডান পক্ষ থেকে পর পর দুটি আক্রমণ করে মরক্কো। কিন্তু দুইটি আক্রমণই কাজে লাগাতে অসমর্থ হয়ে যায় মরক্কো। কিন্তু অসমর্থ হলেও থেমে থাকেনি মরক্কো। একের পর এক আক্রমণ করেই গেছে তারা। গোটা ম্যাচে ১৩টি শট নেওয়া মরক্কোর ৫টি শটই ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু একটিও লক্ষ্যভেদ করতে পারনেই তারা।


৬৭তম মিনিটে এসে হাকিম জিয়েচ দারুণ এক আক্রমণে ওঠেন কিন্তু তার শট রুখে দেন হুগো লরিস। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। ফ্রি কিক হতে বল বাড়িয়ে দেন গ্রিজম্যান। সেখানে ইব্রাহিম কোনাটে হেড করলেও তা চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর বল পেয়ে শট করেন ইউসুফ ফোফানা। কিন্তু তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে।

এরপর ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে মধ্যমাঠে দুর্দান্ত এক বল জেতেন অরেলিয়েন চুয়ামেনি।  হতে বল দেন গ্রিজম্যানকে, যিনি বল নিয়ে ডি বক্সের সম্মুখে ঢুকে আবার বাঁ দিকে এমবাপের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান। এমবাপে বল নিয়ে বাঁ দিকে সামনের দিকে বল দেন থুরামের নিকট আর উনি বল ব্যাক দেন এমবাপেকে। এই যাত্রায় বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে চার-পাঁচজন মরক্কোর ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান দিকে থাকা মুয়ানির উদ্দেশ্যে বল বাড়ান।  থেকে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে ফ্রান্সের ব্যবধান ২-০ করেন র‍্যানডাল কোলো মুয়ানি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow