বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

আজ ১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের বন্দিদশা হতে  পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।

পাকিস্তানের লাহোর থেকে প্রায় ৮০ মাইল সরে লায়ালপুর শহরের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি লাভ করেন শেখ মুজিব। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফেরেন। জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রচারের আহ্বান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে “মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা” প্রতিপাদ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনের শহিদ মনিরুল আলম মিলনায়তন হতে সব টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হতে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। অনুষ্ঠানে বাবা-মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি হবে। আলোচনা পর্বে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের উপর বিশিষ্ট আলোচকেরা আলোচনা করবেন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সম্মুখে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। বেলা ১১টায় শেখ মুজিবের খেয়াল বিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিতে আওয়ামী লীগের  দলের শ্রদ্ধা নিবেদন।

আরও পড়ুনঃ ব্রাজিলে থমথমে পরিস্থিতি, গ্রেপ্তার ১৫শ’

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের আলোচনা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের দ্বারা  রাখার চেষ্টা করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৭১ বর্ষের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নিমন্ত্রণ জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।

১৯৭১ বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত জয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য কর্তৃক জাতি জয়ের পূরণ স্বাদ স্বীকার করে।
জাতির আব্বা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ বছরের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় উনি পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর হতে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ এবং ভারতের অতীতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের আকাশযান বাহিনীর ১টি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রের পথে গমন করেন।

১০ জানুয়ারি সকালে উনি দিল্লিতে নামেন। সেখানে ইন্ডিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, আস্ত মন্ত্রিসভা, উত্তম নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর উৎকৃষ্ট এবং অন্যান্য অতিথি এবং সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা পান শেখ মুজিব। এসময় উনি ভারতের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের কাছে তাদের বদান্য সাহায্যের জন্য খাঁটি কৃতজ্ঞতা জানান। তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে উনি আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে গমন হিসেবে’।

১০ জানুয়ারি দিল্লি থেকে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে ঢাকার মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু। মজায় আত্মহারা লাখ লাখ বাঙালি আবরণ বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি কথন দেন।