ভূমিকম্প: তুরস্কে এত ভবন ধসে পড়ল কেন?

তুরস্কে ভূমিকম্পে এমনকী নতুন বানানো ভবনও ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেশটিতে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা কি এতই বেশি ছিল যে তার দাপটে নতুন ভবনও টিকতে পারেনি? নাকি ভবন নির্মাণে ঘাপলা ছিল? এসব প্রশ্নের জবাব পেতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া তিনটি নতুন ভবনের খোঁজখবর নিয়েছে বিবিসি। ৭ দশমিক ৮ এবং পরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার দুটি বড় ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণ ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, প্রায় সব ধরনের ভবনকেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে নতুন বানানো অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকও রয়েছে, যেগুলো ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হওয়ায় ভবন নিরাপত্তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Feb 11, 2023 - 13:03
 0
ভূমিকম্প: তুরস্কে এত ভবন ধসে পড়ল কেন?
ইস্কেন্দেরুন শহরে ভূমিকম্পের আগে ও পরে সম্প্রতি নির্মিত একটি ভবনর দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

গত সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসেপড়া এসব ভবনগুলোর বেশির ভাগই গত কয়েক বছরে নির্মাণ করা। নবনির্মিত এসব ভবন ভূমিকম্পে ধসেপড়া নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জনমনে। অভিযোগ ওঠেছে, এসব ভবন নির্মাণের সময় যথাযথ আইন মানা হয়নি।

সম্প্রতি নির্মাণ করা ভবন ধসে পড়ার অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সেখানে এসব অভিযোগের বেশির ভাগেরই সত্যতা পাওয়া গেছে।

মালাতইয়া শহরে গত বছর একটি ভবন নির্মাণ শেষ হয়। এ নিয়ে ভবনটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠান একটি বিজ্ঞাপনে বলেছিল, ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে সেরা মানের কাঁচামাল দিয়ে। আর নির্মাণের সময় ভূমিকম্প সংক্রান্ত সরকারের নতুন আইন মানা হয়েছে।

ভূমিকম্পে ওই ভবনটি ভেঙে পড়ার পর বিজ্ঞাপনগুলো আবার সামনে এসেছে। অনেকেই সেগুলো ইন্টারনেটে প্রকাশ করছেন। তবে ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এখন বিজ্ঞাপনগুলো আর নেই।

তুরস্কের ইস্কেন্দেরুন শহরে ধসেপড়া আরেকটি বহুতল ভবনের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত ছবি অনুযায়ী, ওই ভবনটির কাজ শেষ হয়েছিল ২০১৯ সালে। এ নিয়ে কথা বলতে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। তবে তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সোমবার ভোরে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮। যদিও এ মাত্রার ভূমিকম্প খুবই শক্তিশালী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবনগুলো যদি মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হতো, তাহলে এ ভূমিকম্পের পরও সেগুলো টিকে থাকার কথা ছিল।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইমার্জেন্সি প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড আলেকজান্ডার বলেন, ‘এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ব্যাপক। তবে সঠিকভাবে মান বজায় রেখে নির্মাণ করলে এত ভবন ধসে পড়ার ঘটনা ঘটত না।

ইমারত আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা

তুরস্কে ২০১৮ সালে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়। এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইজমিত শহরে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। সে সময় ১৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ওই ঘটনার পর ভবন নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা জোরদার করা হয়েছিল।

অধ্যাপক ডেভিড আলেকজান্ডার বলেন, তুরস্কে যে ভবনগুলো আগে থেকেই আছে, সেগুলো তেমন মানসম্মত কাঁচামাল দিয়ে নির্মাণ করা হয়নি। আর বর্তমানে যেসব ভবন নতুন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে আইন মানা হচ্ছে না।

আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা কেন?

তুরস্কে ভবন নির্মাণের সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত নীতিমালা না মানলে নির্মাতারা নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে ‘ক্ষমা’ পেতে পারেন। ১৯৬০ সাল থেকে এ সুযোগ দিয়ে আসছে তুরস্ক সরকার।

এ ধরনের ক্ষমা দেশটিতে শক্তিশালী কোনো ভূমিকম্প বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আগে থেকে সতর্ক করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

_______________________________________________________

আরও পড়ুনঃ  ভবন নির্মাতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু তুরস্কে
_______________________________________________________

তুরস্কের ইউনিয়ন অব চেম্বারস অব টার্কিশ ইঞ্জিনিয়ারস এবং আর্কিটেক্টস চেম্বার অব সিটি প্ল্যানার্সের ইস্তাম্বুলের প্রধান পেলিন পাইনার গিরিতলিওগলু জানিয়েছেন, সোমবারের ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর প্রায় ৭৫ হাজার ভবন ওই ক্ষমার আওতায় এসেছিল।

বিপর্যয়ের কয়েক দিন আগে তুর্কি গণমাধ্যম জানিয়েছে, একটি নতুন খসড়া আইন পার্লামেন্টে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেটি অনুমোদন পেলে পুরোনো ভবনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক নির্মাণ করা ভবনগুলোও নিয়ম না মেনে নির্মাণের পর ক্ষমার সুযোগ পাবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow