খাবার নেই, স্কুলে যাচ্ছে না শ্রীলঙ্কার শিশুরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক- বাড়িতে খাবার নেই। তাই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা। স্কুলও জানিয়েছে, খাদ্য না থাকে তাহলে বাচ্চাদের পাঠানোর চাই নেই

Jan 20, 2023 - 20:38
 0
খাবার নেই, স্কুলে যাচ্ছে না শ্রীলঙ্কার শিশুরা
২০২১ সালে তড়িঘড়ি করে গভর্নমেন্ট অর্গানিক কৃষির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ঃ সংগ্রহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক- বাড়িতে খাবার নেই। তাই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা। স্কুলও জানিয়েছে, খাদ্য না থাকে তাহলে বাচ্চাদের পাঠানোর চাই নেই। ভয়ংকর সমস্যায় পড়েছেন নাদিকা প্রিয়দর্শিনী। নাদিকা শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ১টি বস্ত্র কারখানার কর্মী।
তিনি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। কারণ, বাড়িতে খাবার নেই। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে, তার পরিবার দিনে আজকাল একবার কিছু সবজি কর্তৃক ভাত খাচ্ছে। কোনো কোনো দিন তাও জুটছে না। বাড়িতে খাবার নেই। চাল ডাল কেনার পয়সা নেই।

আরও পড়ুনঃ কেন্দ্র সচিবের ভুলে 'বি' গ্রেড পেয়ে বিপাকে ৭৫০ শিক্ষার্থী


এই অবস্থায় বাচ্চাদের কী করে বিদ্যালয়ে পাঠাবেন তিনি? প্রিয়দর্শিনী একা-একা নন, একই অবস্থার মুখে পড়েছেন অনেকে। অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের চাকরি গেছে, বিজনেস লাটে উঠেছে। খাবার, ওষুধ, জ্বালানি কেনার পয়সা নেই অধিক পরিবারের। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শূন্য।
তাই বিদেশ থেকে দানাশস্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ২০২১ সালে তড়িঘড়ি করে গভর্নমেন্ট অর্গানিক কৃষির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একারণে এই বছর ৪০ হতে ৫০ শতাংশ ফসল কম হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় খাদ্য শস্যের উপর মুদ্রাস্ফীতির সংখ্যা ছিল ৯৪ শতাংশের বেশি।
অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের চাকরি গেছে, বিজনেস লাটে উঠেছে।অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের জব গেছে, ব্যবসা লাটে উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ  আমাদের গণতন্ত্র আমরাই চালাব, বিদেশিদের ফরমায়েশে চলবে না: ওবায়দুল কাদের


খাবার পাওয়া যাচ্ছে না, পেলেও দাম খুবই বেশি, তাই সর্বাপেক্ষা অসুবিধার ভিতরে পড়েছেন প্রিয়দর্শিনীর মতো গরীব মানুষেরা। তারা তাদের প্রতিদিনের আয়ের উপরই বেঁচে থাকেন। ফলে আজকাল তাদের নিকট বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। গত মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ৩৬ শতাংশ পরিবার নিয়মিত খাদ্য পায়নি।
গত জুনে ইউনিসেফ জানিয়েছিল, শ্রীলঙ্কার ৫৬ হাজার ছোট বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগছে। বাচ্চারা এইজন্য বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। খালি পেটে পড়াশুনা হয় না। প্রিয়দর্শিনী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, 'স্কুলে কিছু বাচ্চা টিফিনের ব্রেকে খাবার খাচ্ছে। কিন্তু আমার বাচ্চাদের কাছে কোনো খাবার নেই। এইজন্য আমি কী করে ওদের স্কুলে পাঠাব?'
তার ১৩ বছর বয়সি ছেলে তবুও জোর করে বিদ্যালয়ে গেছিল। সে বলেছিল, খালি পেটেই সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। অথচ ছয় বছরের মেয়ে কী করে যাবে? ওই বাচ্চা ভদ্র মহিলা তো খিদে ভুলে পড়তে পারে না। খেতে না পাওয়ার জন্য কতজন শিশু স্কুলে যেতে পারছে না, সেই সংখ্যাতত্ত্ব  দেয়নি।
তবে গত জুন মাসে জাতিসংঘের রিপোর্ট জানিয়েছে, সব স্কুলে খাবার দেয়া হয় না, সেখানে বাচ্চারা যাচ্ছে না। ইউনিসেফের মুখপাত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, কয়েকটি এলকায় স্কুলে বাচ্চাদের যাওয়ার হার হ্রাস পায় দাঁড়িয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশে।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব তারা ডি মেল জানিয়েছেন, আহার পেলেই বাচ্চারা স্কুল যাবে। না হলে গ্রামের দিকে বা যে সব বিদ্যালয়ে দৈন্য বাচ্চারা পড়ে, সেখানে তারা খালি পেটে বিদ্যালয়ে যাবে না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow