অভিভাবকদের পা ধরানো সেই বিচারকের অডিও ফাঁস

Apr 8, 2023 - 10:44
 0
অভিভাবকদের পা ধরানো সেই বিচারকের অডিও ফাঁস
সংগ্রহীত ছবি

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভিএম স্কুল) প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নিয়ে দুই অভিভাবককে বিচারকের পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনার একটি অডিওক্লিপ ফাঁস হয়েছে; যা এখন সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল।যেখানে রুবাইয়া ইয়াসমিন নামের ওই বিচারককে বলতে শোনা গেছে- ‘জজ মানে জানিস তুই, জজ শব্দ বানান করতে পারবি তুই?’

গত ২১ মার্চ প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনের কক্ষে দুই ছাত্রীর অভিভাবককে পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।এরপরই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মন্ত্রণায়ের বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।

তার কয়েকদিন পর বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন একটি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে নিজের সব দোষ অস্বীকার করেন।

সেই বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ভর্তির পর থেকে চারমাস তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে জজের মেয়ে বলে নানাভাবে অপদস্থ করে তার সহপাঠীরার।  তবে ভাইরাল অডিওক্লিপ বলছে একেবারে ভিন্ন কথা। এতে স্পষ্ট উঠে এসেছে সেদিনের মূল পরিস্থিতি। সেদিনের কথোপকথনে রুবাইয়াকে পাওয়া গেছে আক্রমণাত্মক আচরণের। অডিও ক্লিপটিতে রুবাইয়া ইয়াসমিনকে চিৎকার করে শিক্ষার্থীদের শাসাতে শোনা যায়।

 

এক পর্যায়ে, এক শিক্ষার্থীকে থাপড়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবেন বলে শাসান তিনি। তিনি বলেন, জজ মানে জানিস তুই, জজ শব্দ বানান করতে পারবি তুই? বানান করে লিখে দেখা। তার এমন আক্রমণাত্মক ও আপত্তিকর শব্দ ব্যবহারে ভড়কে যান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। এসময় এক অভিভাবক বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করলে শিশুদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন জজ রুবাইয়া ইয়াসমিন।

 

সরকারি স্কুল সম্পর্কেও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায় বিচারককে। সেসময় তার সঙ্গে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা এ বিষয়টির পরিনাম সম্পর্কে উপস্থিত ছাত্রী ও অভিভাবকদের সতর্ক করতে থাকেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্য কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থী কথা শোনান। জজের মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার বদলে এমন ঘটনায় আক্ষেপও প্রকাশ করেন শিক্ষক কেউ কেউ ।

এদিকে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডের কোনো মিল না থাকায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করার। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে।  

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বড় ধরনের অন্যায় করেছেন বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন। নিজের লেখা বিবৃতিতে একদিকে যেমন মিথ্যাচার করেছেন তিনি, অন্যদিকে, বয়স বিবেচনায় তার মেয়ের নাম কেউ উল্লেখ না করলেও তিনি অসংখ্যবার একই বয়সী শিক্ষার্থীদের নাম, শ্রেণি-রোল নম্বর উল্লেখ করেছেন।

বিচারক হিসেবে রুবাইয়া ইয়াসমিনের এসব অন্যায় কোমলমতিদের মাঝে বিরূপ প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।  

এ বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তদন্তে অনিয়ম বা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ ঘটনায় যুক্তদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

উল্লেখ্য, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী গত ২০ মার্চ বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী ঝাড়ু দিতে অস্বীকৃতি জানালে এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তর্ক হয় তার। একপর্যায়ে সে নিজেকে জজের মেয়ে পরিচয় দেয়। এরপর রাতে সহপাঠীদের ‘বস্তির মেয়ে’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয় বিচারকের মেয়ে।

 

পোস্টে সে লেখে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে। ’ ওই পোস্টে চারজন সহপাঠী পাল্টা জবাব দেয়। এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াছমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে ওই শিক্ষর্থীদের অভিভাবকদের ডাকতে বলেন।

 

পরদিন ২১ মার্চ বেলা ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই চার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে আসেন। এসময় বিচারক রুবাইয়া ইয়াছমিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গালাগালি করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে ভরার হুমকি দেন। এসময় দুজন অভিভাবক ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চান। এদিকে অভিভাবককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত জজ ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যায় বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow