রেকর্ড সর্বোচ্চ গতিতে কমেছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম

 জুলাইয়ে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ গতিতে কমেছে। অন্যতম শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগর দিয়ে আবারো রফতানি চালুর উদ্যোগ নেয়ায় খাদ্যশস্য ও তেলবীজের বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট কমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টিই দাম কমার মূল কারণ বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

Apr 8, 2023 - 10:34
 0
রেকর্ড সর্বোচ্চ গতিতে কমেছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম
সংগ্রহীত ছবি

রাশিয়া চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায়। এ সময় রুশ সেনারা দেশটির কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর অবরোধ করে। বন্ধ হয়ে যায় সমুদ্রপথে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানি। ফলে আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে খাদ্যপণ্যের দাম।

তবে সম্প্রতি কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর খুলে দেয়ার ব্যাপারে দেশ দুটির মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে বন্দর ব্যবহার করে শস্য রফতানি প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইউক্রেন। ফলে চলমান সংকট নিরসনের সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে দুদেশের মধ্যে চুক্তির পর আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এফএওর খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে, যা এ বছরের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন।

দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্য সূচক ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৫.৬ শতাংশ কমেছে। আর গমের দাম কমেছে ৭.১ শতাংশ। পর্যাপ্ত বৈশ্বিক সরবরাহ এবং রপ্তানিকারকদের মধ্যে শক্তিশালী প্রতিযোগিতার কারণে গমের দাম এতটা কমেছে। 

এছাড়া ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভের সম্প্রসারণ যা ইউক্রেনকে কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো থেকে রপ্তানি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়, গমের মূল্যপতনের পেছনে তারও অবদান রয়েছে।   

এফএওর বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধসহ নানা কারণে জ্বালানি থেকে শুরু করে পরিবহন—সবকিছুরই দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। সাধারণ মানুষ জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যপণ্যের দাম কমায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরছে। এ নিয়ে টানা চার মাসের মতো এফএওর খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক কমেছে।

গত মাসে এফএওর খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৪০ দশমিক ৯ পয়েন্টে। এর আগের মাসে সূচক ছিল ১৫৪ দশমিক ৩ পয়েন্টে। তবে মাসভিত্তিক দাম কমলেও গত বছরের তুলনায় ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা চালানো, প্রধান প্রধান রফতানিকারক দেশগুলোয় বৈরী আবহাওয়া এবং ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয়ের কারণে গত বছরের তুলনায় খাদ্যপণ্যের দাম এখনো ১৩ দশমিক ১ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী।

এফএওর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো টোরেরো বলেন, রেকর্ড সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে খাদ্যপণ্যের দাম কমে যাওয়ার এ খবর স্বস্তিদায়ক। তবে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গিয়েছে।

এফএওর মূল্যসূচক অনুযায়ী, জুলাইয়ে দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। গমের মূল্যসূচক ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। মূলত রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যে কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর খুলে দেয়া-সংক্রান্ত চুক্তি শস্যটির দাম কমাতে সহায়তা করেছে। একই কারণে ভুট্টার মূল্যসূচক ১০ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় মৌসুমি উৎপাদনও দাম কমাতে সহায়তা করেছে।

এদিকে ভোজ্যতেলের মূল্যসূচক কমেছে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ, যা ১০ মাসের সর্বনিম্ন। এফএও বলছে, সব ধরনের ভোজ্যতেলেরই দাম কমেছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ায় পাম অয়েলের দাম লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। অন্যদিকে চিনির মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। মূলত অর্থনৈতিক শ্লথগতির আশঙ্কায় পণ্যটির চাহিদায় ভাটা পড়েছে। এছাড়া শীর্ষ উৎপাদক ব্রাজিলে মুদ্রার অবমূল্যায়নও দাম কমাতে সহায়তা করেছে। এদিকে দুগ্ধপণ্যের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। যদিও তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ ওপরে অবস্থান করছে।

এদিকে দাম কমলেও খুব সহসাই চলমান সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কারণ নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিবর্ণতার ছাপ, মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা এবং আকাশচুম্বী সারের দাম আগামী মাসগুলোয় উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে মারাত্মক চাপের মধ্যে পড়তে পারে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা। খাদ্যপণ্যের দাম কমার বিষয়টিকে স্বল্পমেয়াদি হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের কো-ব্যাংকের নলেজ এক্সচেঞ্জ ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্কট জাকারবার্গ জানান, আগামী বছরও কৃষিপণ্যের বৈশ্বিক বাজার অস্থিতিশীল থাকবে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে প্রকট হতে পারে অস্থিতিশীলতা।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে জাকারবার্গ বলেন, খাদ্যশস্য ও তেলবীজ সরবরাহ খাতে আগামী তিন বছরেও কাটবে না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। আগামী বছরের জন্য আমাদের বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করতে হবে। পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবে, আর এ পরিবর্তন নেতিবাচক দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় আগে থেকেই আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow