‘নয়া পল্টন’ তুমি কার?

Dec 5, 2022 - 13:40
Dec 13, 2022 - 16:54
 0
‘নয়া পল্টন’ তুমি কার?
রবিবার সকালে বিএনপির অফিসের সামনের চিত্র

আর মাত্র পাঁচ দিন পর বহুল আলোচিত ‘১০ ডিসেম্বর’। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে রাজধানীর ‘নয়া পল্টন’ এলাকা। আলোচনার মূলকেন্দ্রে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিএনপি দাবি করেছে, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য তাদের ‘নয়া পল্টন’ই দিতে হবে। সরকারের পক্ষ হতে বলা হয়েছে, গণসমাবেশে এত অধিক পরিমাণ অংশগ্রহণকারী আসবে—তাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই উত্তম।

কিন্তু নাছোড় বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রায় সকল নেতাই প্রতিদিনের বক্তব্যে নয়া পল্টনের দাবি করছেন।

সরকারি দলের পক্ষ হতে অবশ্য এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা জবাবও দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপি কেন সমাবেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে। একসাথে তার পর্যবেক্ষণ—‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কি জন্য বিএনপি যেতে চায় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের ভাষণ বিএনপির পছন্দ নাও হতে পারে।’

সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ আরও কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা বিএনপির সমাবেশ কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হচ্ছে না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা বলছেন, এসবই সরকারের দুরভিসন্ধি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টু‍কুর ভাষ্য, ‘আমরা বিগত দিনে বহুবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে আবেদন করেছি। কিন্তু সবসময় আমাদের পল্টনে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। আমরা সম্প্রতি সবসময়ই নয়া পল্টনে অধিবেশন করি। হঠাৎ করে কী হয়ে গেলো যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মতি দেওয়া হলো! এতে দুরভিসন্ধি আছে বলে মনে করি।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল কয়েক দফায় জানিয়েছেন, নয়া পল্টনেই তারা সালের পর বছর সমাবেশ করছেন। এ স্থানেই খালেদা জিয়া দফায় দফায় সমাবেশ করেছেন। সে কারণে এ নয়া পল্টনেই অনুমতি দিতে হবে।

রাজনীতিতে এত আলোচনার এ নয়া পল্টন এলাকাটির সূচনা ঠিক কবে হয়েছিল? নয়া পল্টন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ। এখানকার সাম্প্রতিক কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল, শব্দ আওয়ামী লীগের সভাপতি।

২০০৫ সালে আগের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পল্টনকে থানায় রূপান্তরিত করেছিলেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন নেতা জানান, মতিঝিল থানার ভাগ নিয়ে ২০০৫ সালের ২৭ জুন পল্টন থানা গঠিত হয়েছিল।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা, সাবেক খ্যাতনামা ওয়ার্ড কমিশনার নাজির হোসেন রচিত ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ শীর্ষক গ্রন্থে  হয়ে গিয়েছে নয়া পল্টনের কথা।

নাজির হোসেন উল্লেখ করেন, ‘পুরানা পল্টন এবং নয়া পল্টন এলাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনানিবাস ছিল। দিলকুশাস্থ এ এলাকাটিকে গার্ড বাজার  হতো। ১৮৪০ সালে জনসাধারণের প্রয়োজনে বাজারটি ওই স্থান হতে অপসারণ করা হয়। পরবর্তীকালে সেনানিবাসটি রমনা রেসকোর্সে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে মিরপুরের বেগুনবাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। সেনানিবাস ছিল বলেই ওই এলাকাটি পুরানা পল্টন ও নয়া পল্টন নামে পরিচিত হয়ে আসছে।’

তিনি এইরকম লিখেন, ‘পুরানা পল্টনের আজ যে স্থানে হাউজ ভবন করপোরেশন ভবন রয়েছে, সেখানে একটা দিঘি ছিল। এ পুকুরে প্রতিবছর জোড়া ভোগ নিতো, অর্থাৎ একজোড়া ছেলেমেয়ে প্রতিবছর ডুবে মারা যেতো। ঢাকাবাসীর নিকট এই পুকুরটি জোড়ভোগ জলাভূমি বলা হয় পরিচিত ছিল।’

কালের আবর্তনে ২৮/১, ভিআইপি রোড, নয়া পল্টনে দলীয় অফিস খোলে বিএনপি। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে বিএনপি দফতর করলেও খালেদা জিয়ার আমলে পাল্টে যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

দলের চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম উইং এবং বিএনপির গণমাধ্যম উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এরশাদ সরকারের পতনের পর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে রাজধানীর নয়া পল্টনের আধুনিক ভবনটিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাজ চালু করে বিএনপি।’

শায়রুল কবির খান জানান, ‘এর প্রথমে ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে ছিল অফিস, সেখানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বসতেন।’

একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি কার্যালয়ের আলয় নিয়ে একটি জটিলতা ছিল। কয়েক বছর প্রথমে নিষ্পত্তি করা হয়। যদিও বিএনপির এক নেতা দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উভয় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ে জটিলতা আছে।

ভবন নিয়ে যত জটিলতাই থাকুক, আপাতত বিএনপির চিন্তায় এখন নয়া পল্টন। বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে এরইমধ্যে দুইবার লিখিত চিঠি এবং তিনবার ঢাকনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চলমান এই আলোচনার মধ্যেই নয়া পল্টনের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে পুলিশ। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি ছিল। শনিবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

বাড়তি নিরাপত্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি অফিসের সামনে নতুন করে কোনও পুলিশ মেম্বার মোতায়েন করা হয়নি। বিএনপি অফিসের সম্মুখে পুলিশের নিয়মিত ডিউটি। এটি সবসময়ই থাকে।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow