দেশের রিজার্ভ এখন ৩৪.২১ বিলিয়ন ডলার
রাষ্ট্রের ভিতরে ডলার সংকট চরমে। এই সংকটের মধ্যেই অর্থনীতির অন্যতম সূচক রেমিট্যান্স গতি নেতিবাচক ধারায়। যদিও চলমান অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাই ও এর পরের মাস আগস্টে দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। তারপর টানা দুই মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে রেমিট্যান্স। চলতি নভেম্বরে দুই বিলিয়ন ডলারের কক্ষে পৌঁছাতে পারবে না। ইদানিং পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আসেনি রেমিট্যান্সের ধারা। যদিও বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা প্রচেষ্টা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার।
এদিকে চলমান ডলার সংকট মোকাবিলায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ হতে দিন দিন ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি নভেম্বরের শুরুতে ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকলেও এখন তা হ্রাস পায় ৩৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই রিজার্ভ দ্বারা চার মাসের (প্রতি মাসের মধ্যে ৮ বিলিয়ন হিসাবে) আমদানি খরচ মেটানো যাবে।
তবে, আন্তর্জাতিক কারেন্সি তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব উপায় ফলো করে দেশের রিজার্ভ হতে আরও ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাতিল যাবে। সেক্ষেত্রে দেশের রিজার্ভ হবে ২৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে রেমিট্যান্স আসার গতিও স্লোথ হয়েছে। চলতি মাস নভেম্বরের প্রথম ১৮ দিনে প্রায় ১০৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর রাষ্ট্রের বিদেশি কারেন্সির রিজার্ভ মজুত ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। বিগত ৭ নভেম্বর আরও কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। তারপর নভেম্বরের ৭ তারিখ রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। একসাথে আমদানি দায় মেটাতে ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়ে যায় রিজার্ভ থেকে। ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে প্রায় ৩৪ দশমিক ২৮ বিলিয়নের নেমে আসে।
গত ৯ নভেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, ১৪ নভেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে, ১৫ নভেম্বর রিজার্ভ হতে ১১৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করায় তা নেমে আসে ৩৪ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। ১৬ নভেম্বর ৬৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে, ১৭ নভেম্বর আবারও বেড়ে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়। পরে তা
আইএমএফ বলছে, রিজার্ভ হতে টাকা-পয়সা নিয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন তহবিল গড়ন এবং
আইএমএফের মতে, সবমিলিয়ে সম্প্রতি রিজার্ভে যে টাকা-পয়সা দেখানো হচ্ছে, ওই স্থান হতে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাতিল যাবে। সে পরিমাণে সোমবার রাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মজুত দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক অফিসার জানান, রাষ্ট্রের বৈদেশিক কারেন্সির রিজার্ভ প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এখান হতে সরকারি ক্রয়ে ডলার কম করা হয়। আবার প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতিনিয়ত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বলা যায় প্রতিদিনই রিজার্ভ কম-বেশি হয়। তবে আমাদের যে রিজার্ভ পজিশন সেটাতে ডরের কিছু নেই।
অন্যদিকে, নভেম্বরের প্রথম ১৮ দিনে প্রায় ১০৬ কোটি (১০৫ কোটি ৯৯ লাখ) ডলার বা ১ দশমিক নিঃশেষ ৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি ডলার ১০৮ টাকা হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। প্রবাসী আয়ের এই নীতি অব্যাহত থাকলে চলতি নভেম্বরের পুরো সময়ে ১৭৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
নভেম্বরের ১ম ১৮ দিনে দেশ মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের দ্বারা ১৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে আগত ৮৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, বৈদেশিক ব্যাংকগুলোর দ্বারা এসেছে ৩৭ লাখ ডলার এবং বিশেষায়িত ১টি ব্যাংকের দ্বারা আগত দুই কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এ টাইমে সর্বাপেক্ষা বেশি রেমিট্যান্স আগত ইসলামী ব্যাংকের (২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার) মাধ্যমে। এছাড়াও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের দ্বারা ৬ কোটি ৪২ লাখ এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের দ্বারা ৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
তবে, এ টাইমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি অগ্রগতি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সমাজ ব্যাংক, বৈদেশিক হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ভারতের মাধ্যমে।
বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের অপরদিকে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়াসহ নানা প্রচেষ্টা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হুন্ডি প্রতিরোধের নিউ বুদ্ধি করে নিয়েছে মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত আর্থিক গোয়েন্দা কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। হুন্ডির দ্বারা রেমিট্যান্সে পাঠানোয় সম্পৃক্ত অভিযোগে ২৩০ লোক বেনিফিশিয়ারির হিসাব সাময়িকভাবে উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ করে আর্থিক সংস্থাটি। পরে বৈধপথের প্রতিশ্রুতিতে এসব হিসাবগুলো পুনরায় খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়।
What's Your Reaction?