কী আছে পৃথিবীর গভীরতম খাদ মারিয়ানাতে?

বিশ্বের  থেকে গভীর খাতের গভীরতা কতো জানেন? জানানো যায়, এ খাতের গভীরতা অনায়াসে গিলে নিতে পারে একটা আস্ত হিমালয়কে

Dec 19, 2022 - 07:46
Dec 19, 2022 - 19:40
 0
কী আছে পৃথিবীর গভীরতম খাদ মারিয়ানাতে?
।এটি সুচালো খাড়া একটি খাদ যেটার সর্বোচ্চ গভীরতা ১০,৯৯৪ মিটার।

বিশ্বের  থেকে গভীর খাতের গভীরতা কতো জানেন? জানানো যায়, এ খাতের গভীরতা অনায়াসে গিলে নিতে পারে একটা আস্ত হিমালয়কে। শুনতে আজব হলেও কথাটা সত্যি। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্যাসিফিক মহাসাগরে উত্তর-পূর্ব হতে দক্ষিণ-পশ্চিমে ছড়ানো এই খাতের) বলা হয়ে থাকে চাঁদে যত জন ব্যক্তি গিয়েছে তার চেয়ে কম মানুষ গিয়েছে মারিয়ানা ট্রেঞ্চে। এতটাই গভীর আর দূর্গম সেই স্থান। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্যাসিফিক মহাসাগরে অবস্থিত।এটি সুচালো খাড়া একটি খাদ যেটার সর্বোচ্চ গভীরতা ১০,৯৯৪ মিটার।যদিও এই গভীরতা আরও অধিক হতে পারে বলা হয়ে থাকে অনেকের ধারণা।এটি ২৫৫০ কিলমিটার দীর্ঘ ও ৬৯ কিলোমিটার চওড়া। এসব তো গেল কেতাবি পরিচয়।চলুন জেনে নেয়া যাক কয়েকটি অসাধারণ তথ্য (Mariana Trench) 

আরও পড়ুনঃ বিস্ময়কর স্থাপত্য মিশরের পিরামিড

মারিয়ানা ট্রেঞ্চের এর মত আরও কি খাত আছে ?

মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মত এরূপ অগণিত খাত ছড়িয়ে আছে সাগর মহাসাগরের তলদেশে। প্রকৃতপক্ষে খাতগুলো সাগরের তলদেশ হতে নেমে যাওয়া এক ১টি ফাটল বা খাদ। এগুলো কিছুটা বিস্তৃত এবং সরু আকৃতির হয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সাগরের তলদেশে এরকম ২৬টি খাতের সন্ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরেই আছে ১৮টি খাত। রহস্যময় মারিয়ানা ট্রেঞ্চও প্রশান্ত মহাসাগরের আদার্স খাতগুলোর একটি। ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও মারিয়ানা ট্রেঞ্চ সম্মন্ধে আজও পুরোটা জানা সম্ভব হয়নি। তাই এর রহস্য ভেদ করতে এখনো ঘটমান নিয়মিত নতুন অভিযান। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা অতল এবং দুর্গম এই খাতের কতিপয় জানা অপরিচিত তথ্য নিয়ে আমাদের আজকের ব্যবস্থা 

মারিয়ানা ট্র্যাঞ্চ এর নামকরন?

মারিয়ানা ট্র্যাঞ্চ সতের শতাব্দীতে স্পেনের সম্রাট ছিলেন ৪র্থ ফিলিপ। ১৬৬৭ সালে স্পেনিয়ার্ডরা প্রশান্ত মহাসমূদ্রের কতিপয় দ্বীপ আধিপত্য করে সেখানে ১টি কলোনী স্থাপন করেন। তারা সম্রাট ৪র্থ ফিলিপের স্ত্রী মারিয়ানার নামে কলোনীটির অফিসিয়াল নামকরণ করেন লা মারিয়ানাস। বিশ্বের গভীরতম এ খাতটি মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের কাছে বলে এর নামকরণ করা হয় মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ সাগরের তলদেশে ১টি বৃত্তচাপের আকারে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে প্রায় ২৫৫০ কিমি বা ১৫৮০ মাইল ব্যাপী বিস্তৃত। তবে চওড়ায় এটি মাত্র ৬৯ কিমি বা ৪৩ মাইল। অনুমান করা হয় খাতটির সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১১ কিমি বা ৩৬,০৭০ ফুট।

১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে চ্যালেঞ্জার ডিপে অবতরণ করে বাথিস্কাফ ত্রিয়েস্ত নামের জলযান। এই ডুবজাহাজের অভিযাত্রী ছিলেন সুইস মহাসাগর প্রকৌশলী জ্যাকুস পিকার্ড এবং মার্কিন নৌবাহিনীর ল্যাফটেন্যান্ট ডোনাল্ড ওয়ালশ। তারাই ১ম মারিয়ানা ট্রেঞ্চের তলায় অবতরণ করেন। তারা এ জলযানে চড়ে ১০,৯১৫ মিটার গভীর পর্যন্ত যেতে উপযুক্ত হন। এটি ছিল ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গভীরতম ডুব। 

 

মারিয়ানা ট্রেঞ্চের প্রথম ব্যক্তি?

সম্প্রতি ২০২১ সালের পহেলা মার্চ রিচার্ড গেরিয়ট (Richard Garriott) চ্যালেঞ্জার ডিপে অবতরণ করেন ও এর দ্বারা উনি বনে যান পৃথিবীর ১ম মানুষ যিনি একই সঙ্গে পৃথিবীর উভয় মেরু, মহাকাশ এবং বিশ্বের গভীরতম স্থানে গিয়েছেন। লিমিটিং ফ্যাক্টর (Limiting Factor) নামক জলযানে করে তাদের এ অভিযানটি ছিল প্রায় ১২ ঘন্টার! চ্যালেঞ্জার ডিপে অবতরণে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগেছিল, চারঘন্টা তারা সেখানে অবস্থান করেছিলেন এবং চার ঘণ্টা সময় ফিরে আসতে ব্যয় হয়েছে। লিমিটিং ফ্যাক্টর জলযানে প্রবেশের পূর্বে রিচার্ড গেরিয়ট পিচার্ড ও ওয়ালশের এ অবতরণের আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের আন্দাজ ছিল এত উচ্চচাপে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের অভ্যন্তরে কোনো প্রাণের সত্তা থাকা সম্ভব নয়। অথচ ট্রেঞ্চে অবতরণের পর ট্রিয়েস্টের  ফ্লাডলাইটে আলোতে পিচার্ড ফ্লাটফিশ (Flatfish) এর মতো পশু দেখেছিলেন যেটি সম্পর্কে পরবর্তীতে তিনি তাঁর এ অভিযান বিষয়ক ১টি বইয়ে ব্যাখা করেন। কয়েক দশক ধরে জীববিজ্ঞানীদের করা প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব হিসেবে পিচার্ড লিখেছেন,

 সময়ের পরিবর্তনের ভূমিকম্প ২০১১ সালে সংঘটিত সুনামির কথা তো মনে আছে যা ৩৫ টির বেশি উপকূলীয় অঞ্চলে ২০,০০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটায় এবং যার প্রভাবে ৬৬৬ টি আফটারশক নোটিশ যায়। গবেষনায় লক্ষ করা যায় এর উৎপত্তি হয় এ ট্রেঞ্চের ভূমিকম্প্রের প্রভাবে। এটা এতটাই প্রকট ছিল যেএই ভূমিকম্প পৃথিবীকে তার অক্ষ থেকে ১০-২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সরিয়ে দেয় যেটার ফলে দিনের দৈর্ঘ্য ১.৮ মাইক্রোসেকেন্ড কমে যায়!!!

 তা সত্ত্বেও নয় পৃথিবীর কেন্দ্র এত গভীর হওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগপ্তে পারে যে তাহলে কি মারিয়ানা ট্রেঞ্চের শেষ বিন্দু পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু!!! না, তা নয়। কারন পৃথিবী চারদিকে সমান ভাবে গোল না হওয়ায় একটী সুনির্দিষ্ট বিন্দু কেন্দ্র হতে পারে না। 

 জীবনের বিকাশ তাই বলে কি এখানে জীবনের বিকাশ ঘটেনি! ঘটেছে। যদিও এর পানি এসিডিক এবং বিষাক্ত অথচ অদ্ভুতুড়ে, ভিন্নরকম প্রাণের প্রসার ঘটেছে এখানে। যদিও আগে মনে করা হত হয়ত কয়েকটি ব্যাক্টেরিইয়া বা অনুজীব এ ট্রেঞ্চে থাকতে পারে তা সত্ত্বেও কিছু দিন আগে জাপানি গবেষকরা জীবিত  প্রানীর ফটো তুলতে পেরেছেন যা প্রমাণ করে এ মৃত্যুপুরীতেও প্রাণের বিকাশ সম্ভব।

দৈত্যাকার জীব সর্বাপেক্ষা উত্তেজনাকর বিষয় হল সাম্পপ্রতিককালে এখানে দৈত্যাকার প্রানীর উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে বিজ্ঞানীরা যাকে এলিসেলা জাইগেনশিয়া (Alicella gigantea) বলে নামকরণ করেছেন যা সাধারন এম্ফিপোডের ২০ গুণ বড়।

গবেষণার নতুন দিক এই দূর্গম স্থানে প্রাণের প্রচার গবেষকদের নিউ চিন্তার নীতি উন্মোচন করেছে। প্রবল চাপের মাঝেও জীবনের এই বিকাশ হয়তো ফিউচারে মহাকাশে প্রানের বিকাশ নিয়ে গবেষণা করতে সাহায্য করবে বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow