পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

ঢাকার জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, ভবিষ্যতে সেটা সামাল দেওয়ার জন্য পারবে না গণপরিবহনব্যবস্থা। এমনকি প্রচলিত মেট্রো রেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) মতো প্রকল্পও হিমশিম খাবে বলা হয় ধারণা করা হচ্ছে

Jan 17, 2023 - 12:34
 0
পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ
এতে খরচা ধরা হয়ে গিয়েছে ৩২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে পরামর্শক খাতে: সংগ্রহীত ছবি

ঢাকার জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, ভবিষ্যতে সেটা সামাল দেওয়ার জন্য পারবে না গণপরিবহনব্যবস্থা। এমনকি প্রচলিত মেট্রো রেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) মতো প্রকল্পও হিমশিম খাবে বলা হয় ধারণা করা হচ্ছে। এইজন্য যানজট নিরসনের রাস্তা হিসেবে পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। সরকার সম্প্রতি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। চলতি বছরের জুনে সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাইমারি নকশার কাজ শেষ হবে। এতে খরচা ধরা হয়ে গিয়েছে ৩২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে পরামর্শক খাতে।

আরও পড়ুনঃ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন মির্জা ফখরুল

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটানা ঢাকাকে পাতাল রেলের আওতায় আনতে আপাতত খরচা ধরা হয়েছে আট লাখ ৮২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রায় দেড় গুণ। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ২০৩০ সালে চারটি রুট চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে ও নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় তিন লাখ ৫৪ হাজার ৫২১ কোটি টাকা।

এই চার রুটের মধ্যে ঝিলমিল থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রুটে প্রতি কিলোমিটারে  হবে দুই হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। গাবতলী থেকে ভোলাব ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার পথে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে দুই হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। কেরানীগঞ্জ-সোনাপুর প্রায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার পথে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে দুই হাজার ২১৭ কোটি টাকা। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার রুটে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা করে। চার রুট নির্মাণে  হবে রাষ্ট্রের চলতি অর্থবছরের সর্বমোট বাজেটের অর্ধেকের বেশি। কিন্তু স্বপ্নের প্রকল্প নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে ৩২১ কোটি টাকা।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বে করোনায় আরও ৯৬২ জনের মৃত্যু

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রথমিক চিত্র তৈরির কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে স্পেনের টিপসা। ১১টি রুটের ভিতরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০৫ কিলোমিটার লম্বা চারটি রুট ২০৩০ বছরের ভিতরে নির্মাণের প্রস্তুতি রয়েছে।

বলা হচ্ছে, সাবওয়ে নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ এবং নির্মাণজনিত কোনো সংকট নেই। সাবওয়েটি নির্মিত হলে ঢাকা মহানগরের প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবীর অর্ধেক মাটির নিচ দ্বারা যাতায়াত করতে পারবেন। এতে নগরে যানজট কমবে। মেট্রো রেলের মতোই পাতাল রেল পুরোপুরি বিদ্যুিনর্ভর থাকবে। চলবে মেট্রো রেলের মতো একই উপায়ে চলবে।

ঢাকা মাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নগরকেন্দ্রিক রেলব্যবস্থা তৈরির অভিজ্ঞতা থাকায় সাবওয়ে নির্মাণের দায়িত্বও প্রতিষ্ঠানটির কাছে থাকবে বলা হয় আন্দাজ করা হচ্ছে। আপাতত পাতাল রেল তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক নকশার কাজ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। কিন্তু সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে তৈরি শুরুর পূর্বেই একটি কম্পানি প্রস্তুত করার জন্য হবে।

কয়েকটি স্তরে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ১ম স্তরে স্তাবিত চার রুটরে ভিতরে রয়েছে, রুট-১ : কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল থেকে টঙ্গী জংশন পর্যন্ত। এ ৩৫ কিলোমিটার রাস্তায় থাকবে মোট ২৪টি স্টেশন। ঝিলমিল, তেঘরিয়া বাজার, মুসলিমনগর, সদরঘাট, গুলিস্তান, কাকরাইল, হাতিরঝিল, বিজি প্রেস, রজনীগন্ধা মার্কেট, ভাসানটেক সরকারি শীর্ষ বিদ্যালয়, কালশী, উত্তরা সেক্টর-১৭, নর্থ বাউনিয়া, উত্তরা সেক্টর-১৪, উত্তরা সেক্টর-১০, মাছিমপুর ও টঙ্গী জংশন এলাকায় স্টেশন করা হবে।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন গোলাপ : ব্যারিস্টার সুমন

রুট-২ : গাবতলী থেকে ভেলাব ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার এরিয়ায় ১৪টি স্টেশন হবে। গাবতলী, গোলারটেক, তুরাগ সিটি, জাতীয় চিড়িয়াখানা, পূর্বাচল, গাবতলী-ভেলাব ইউনিয়ন সেক্টর-১১, পূর্বাচল সেক্টর-২১, পূর্বাচল সেক্টর ইস্ট, পূর্বাচল মালুম সিটি এবং ভেলাব ইউনিয়নে স্টেশন হবে।

রুট-৩ : কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর প্রায় সাড়ে ২৬ কিলোমিটারে ১৫টি স্টেশন হবে। কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ, চকবাজার, নয়াবাজার, কেরানীগঞ্জ-সূত্রাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মৌচাক, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর ও সোনাপুরে স্টেশনগুলো প্রস্তুত হবে।

রুট-৪ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় ৩২টি স্টেশন হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আশুলিয়া মডেল  ইস্ট, উত্তরা সেক্টর-১৬, উত্তরা নর্থ, আজমপুর কাঁচাবাজার, শাহ কবীর মাজার নর্থ, আফতাবনগর নর্থ, ওয়েস্ট নন্দীপাড়া, গ্রিন মডেল টাউন, মাতুয়াইল রোড, নন্দিপাড়া দক্ষিণ, বরুয়া সাউথ, বসুন্ধরা সাউথ, সান ভ্যালি জবাব পাড়া, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, ইস্ট মোহাম্মদবাগ, ফতুল্লা স্টেশন, ডিসি অফিস নতুন কোর্ট ও নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় হবে রেলস্টেশন।

বিশ্লষকদের মতে, ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ার গতির সঙ্গে ভবিষ্যতে গণপরিবহনব্যবস্থা সামাল দিতে পারবে না। ফলে ট্রেনের উপরে চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে মেট্রোরেলের পক্ষে এই চাপ সামাল দেওয়া কঠিন। ফলে গর্ভনমেন্টের এই উদ্যোগ সময়োপযোগী বলেই মনে করা হচ্ছে। এতে খরচা বেশি হলেও সুফল মিলবে। যাহার উপকারভোগী হবে রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow