এবার বইমেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে

ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে এবারের অমর একুশে বইমেলা এক মাসের পরিবর্তে দুই সপ্তাহ করে ১৫ দিন পেছালেও সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার চালু হতে যাচ্ছে। 

Jan 22, 2023 - 12:13
 0
এবার বইমেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে
এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য 'কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ চাই: সংগ্রহীত ছবি

ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে এবারের অমর একুশে বইমেলা এক মাসের পরিবর্তে দুই সপ্তাহ করে ১৫ দিন পেছালেও সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার চালু হতে যাচ্ছে। 

এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য 'কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ চাই।

বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, একাডেমি অংশে স্টলগুলোর চারপাশ পরিষ্কার করা হচ্ছে। বাঁশ, কাঠ, বোর্ড স্টলগুলোর নির্ধারিত কাঠামো প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। মূল অনুষ্ঠানস্থলের সাজানো-গোছানোর কাজও প্রায় সমাপ্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ভার্চুয়ালি মেলাটি উদ্বোধন করবেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্টল নির্মাণের কাজ করছেন মিস্ত্রি আব্দুর রহমান। উনি টিবিএসকে বলেন, "আমাদের স্টল নির্মাণের প্রায় শেষ, প্রার্থনা করি মেলা শুরুর কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা আগে আমাদের সকল কাজ শেষ করতে পারবো।"

আরও পড়ুনঃ শিক্ষক পেটানো সেই আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার , ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্তকর্তা প্রিন্স শীল টিবিএসকে বলেন, "আসলে ওমিক্রনের কারণে মেলার সময়সূচি, তারিখ এবং চালু হওয়া নিয়ে দোলাচল থাকার কারণে আমাদের মানসিক প্রস্তুতি কম ছিল, তবে এখন মোটামুটি সব কাজ শেষ করতে পারছি, আশা করি সুনির্দিষ্ট দিনে আমাদের আরম্ভ করার জন্য কোন সমস্যা হবে না।"

প্রতি বছর সাধারণত ডিসেম্বর মাসেই মেলার প্রস্তুতি নিতে চালু করত বাংলা একাডেমি, জানুয়ারিতে দেয়া হতো বিভিন্ন প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দের কাজ। এই যাত্রায় সিডিউল অনুযায়ী শুরু করার জন্য না পারায় লেখক-প্রকাশনীর অধিকাংশই প্রস্তুতির কারণে পিছিয়ে গেছেন বলে জানান কয়েকজন লেখক।

তেমনি একজন কিশোর লেখক আলমগীর গোলাপ। উনি গত দু'টি মেলায় শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে পরপর দুইটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলেন। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও  বইমেলায় উনি তার বইটি প্রকাশ করতে পারেননি। 

আলমগীর টিবিএসকে বলেন, "এবছর ওমিক্রনের কারণে বাংলা একাডেমি জানুয়ারি হতে স্পষ্ট ঘোষণা না দেয়ায় আমি মনে করেছিলাম মেলা অনুষ্ঠিত হবে না, এজন্য আমার প্রবন্ধ প্রকাশের কাজটি সমাপ্ত করতে দেরি হয়ে যায়, নির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকায় আমাদের মাঝে কাজের উদ্দীপনা  গেছিল, প্রকাশক-লেখক সবারই সেইম অবস্থা, মনে হলো এই যাত্রায় মেলায় প্রকাশক-লেখকের উদ্দীপনা কিছুটা কম থাকবে, এছাড়াও বিদ্যালয় বন্ধ থাকায়ও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলা হয় মনে হচ্ছে।"

গত বছর বইমেলায় ৪৬৬ প্রকাশনী নতুন-পুরাতন বই নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে।

এবছর এর সংখ্যা কত জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা টিবিএসকে বলেন, "কত প্রকাশনী অংশগ্রহণ করছে এর সঠিক সংখ্যা জানা যাবে আগামীকাল বা পরশু। রিজন মেলার সময় ১৪ দিন হওয়ায় ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত প্রকাশনী টাকা জমা দিয়ে সে টাকা আবার ফেরত নিয়ে গেছে।"

আরও  পড়ুনঃ ভারতে সাজাপ্রাপ্ত ই-অরেঞ্জের সোহেল জামিন নিয়ে পালিয়েছেন 

বাংলা একাডেমি খবর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এবারের বইমেলা আপাতত ১৫ ফেব্রুয়ারি হতে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। বইমেলা ডেইলি দুপুর ২টা হতে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে দর্শনার্থীরা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন ও রাত ৯টায় মেলার আলোকবাতি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য সরকারি

ছুটির দিনে মেলা সকাল ১১টা থেকে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা সকাল বেলা ৮টা থেকে চালু হয়ে রাত্রিতে একই সময়ে শেষ হবে।"

এর আগে শুক্রবার সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অমর একুশে বইমেলা পরিদর্শন করার সময় বইপ্রেমীদের কোভিড-১৯ টিকা কার্ড বহন করার জন্য ও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণের নিমন্ত্রণ জানান। 

তিনি প্রকাশকদের আশ্বস্ত করেছেন যে শাসকবর্গ তাদের লোকসান কমাতে স্টল ভাড়া ৫০% কমিয়ে দেবে।

শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে তিনি এইরকম বলেন, "কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কমলে আমরা মেলার মেয়াদও বাড়াব।"

এবার সাড়ে সাত লাখ স্কয়ার ফুট জায়গাজুড়ে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। শিশুদের জন্য আলাদা মঞ্চের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুরা খেলাধুলা করার জন্য পারবে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য মঞ্চ রাখা হয়েছে।

তবে, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমিকে চিঠি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, বইমেলা যেন ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পর্যন্ত করা হয়।

তাদের দাবি, গত বছর মেলায় প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছেন ও সারা বছর তাদের ব্যবসা ভালো ছিল না। মেলা ৩০ দিন হোক বা ১৪ দিন হোক স্টল নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক সব  একই। এবারও যদি ১৪ দিনের মেলা হয়, তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow