হুন্ডির থাবায় প্রবাসী আয়ে ধস

প্রবাসী আয় ধসের মূলে রয়েছে হুন্ডি। প্রবাসীরা ডলারের বিপরীতে একটু বেশি টাকা পেলেই বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির আচ্ছাদন নেন

Dec 22, 2022 - 19:44
Dec 24, 2022 - 12:15
 0
হুন্ডির থাবায় প্রবাসী আয়ে ধস
সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে নেমে আসে

প্রবাসী আয় ধসের মূলে রয়েছে হুন্ডি। প্রবাসীরা ডলারের বিপরীতে একটু বেশি টাকা পেলেই বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির আচ্ছাদন নেন।  ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রাবাসী  আসা হ্রাস পায় যায়।বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহের তথ্য বিশ্লেষণে লক্ষ্য যায়, সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। অক্টোবর মাসে আরও খানিকটা কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখে ডলারে ঠেকে। কিন্তু চলতি বছর চালু হয়েছিল ভালো রেমিট্যান্স  দিয়ে। জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আর আগস্ট মাসে আসে ২০৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এ সময় প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের ভ্যালু বেঁধে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) শীর্ষ নেতারা ১১ সেপ্টেম্বর এক সমিতিতে প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৮ টাকা বেঁধে দেন। এ সময় রপ্তানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেওয়া ৯৯ টাকা।

আরও পড়ুনঃ আওয়ামী লীগে কাদেরের ‘হ্যাটট্রিক’, নাকি আসছে অন্য কেউ

অর্থনীতিবিদ এবং বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে ডলারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হুন্ডি মার্কেটের দখলে। তারা বলছেন, এর আগে প্রবাসী আয়ে ডলারের মূল্য বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে যার যার মতো করে ডলার কিনেছে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেমন কিনেছে, আবার হুন্ডি মার্কেটেও নিজেদের মতো প্রাইস কর্তৃক ডলার কিনেছে। ডলারের দর যখন বেঁধে দেওয়া হয়েছে, ব্যাংকগুলো আর নির্ধারিত দামের অধিক দরে ডলার কিনতে পারেনি। অন্যদিকে ডলারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক টাকা দ্বারা কিনেছে হুন্ডি মার্কেট। ফলে একদিকে ব্যাংকগুলো যেমন ডলারের কেনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, অন্যদিকে একচ্ছত্র আধিপত্য পেয়েছে হুন্ডি মার্কেট। এর প্রভাব পড়ে সেপ্টেম্বর মাসের বিদেশি আয়ে।

প্রবাসী আয়ের ধসের পেছনে ডলারের মূল্য বেঁধে দেওয়া কাজ করেছে। একটু বহু টাকা পাওয়ার জন্য প্রবাসীরা হুন্ডির ছায়া নিয়েছেন, বলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। বাংলানিউজকে উনি বলেন,  সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল একশ কোটি ডলার। শেষের ১৫ দিনে কমে ৫০ কোটি ডলারে ঠেকে।

ডলারের মূল্য বেঁধে দেওয়া ছাড়া এ সময় বিদেশি  হ্রাসের মতো কোনো ঘটনা সেপ্টেম্বর মাসে ঘটেনি। এই সময়ে প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এবং যে  দেশে গেছে, সেই  রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বিদেশি  বৃদ্ধি পাওয়ার যৌক্তিক রিজন ছিল। উল্টো ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির ছায়া নিয়েছে, বলেন এ অর্থনীতিবিদ।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, এই সময়ে বিদেশগামী মানুষের প্রায় আশি ভাগই গেছে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান ও আশপাশের এই সব দেশে। এ সকল দেশে লড়াই বা ভিন্ন কারণে নেগেটিভ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। বরং এই  দেশ সুবিধাভোগী। এই  দেশে মূল্যস্ফীতি কম, জীবন নির্বাহের ব্যয় কম। ফলে বিদেশি ইনকাম না  বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। এর পেছনে মূল রিজন হিসেবে কাজ করেছে প্রবাসী আয়ের ডলারের মূল্য বেঁধে দেওয়া।

সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের পরবর্তী মাস প্রবাসী  কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বর মাসে বিদেশি আয় আগত ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্থে বৃদ্ধির ধারায় আছে। এটা পসিবল হয়েছে কিছু ব্যাংক প্রবাসী আয়ের ডলার কেনার ক্ষেত্রে বাফেদার বেঁধে দেওয়া দাম মানছে না। তা সত্ত্বেও বেশ ভালো ব্যাংকগুলো এখনো বাফেদার নির্দেশনা মানছে। এর ফলে এই সব ব্যাংক ডলার প্যাঁচ আছে। আগামীতেও এ  ব্যাংকের ডলার সংকট শিগগিরই কমার সম্ভাবনা আছে বলা হয় মনে হলো না, যোগ করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকনা অফিসের সাবেক অর্থনীতিবিদ।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করতে হলে প্রবাসী আয়ের ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া এবং নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর উপদেশ দেন এ অর্থনীতিবিদ। আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা, মানি ট্রান্সফার ফি ফ্রি করে দেওয়া, পাঠানো সরল এবং মোবাইল ব্যাংকিং ইউজ করে বিদেশি  পাঠানোর ব্যবস্থাতে কিছুটা কাজ হবে। তবে পুরস্কার সম্মাননা আপাতত বিদেশি আয়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow