রাজনীতি না করার মুচলেকা হেফাজতের

কারাবন্দি হেফাজত নেতাদের  চেয়েছেন সংগঠনের নেতারা। হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে সচিবালয়ে তার অফিসে দেখা করে বন্দি নেতা-কর্মীদের নিজেদের জিম্মায় জামিনের ব্যবস্থা করার আবদার করেছে।

Jan 25, 2023 - 11:44
 0
রাজনীতি না করার মুচলেকা হেফাজতের
দুপুর ২টা হতে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলা বৈঠক শেষে কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি : সংগ্রহীত ছবি

কারাবন্দি হেফাজত নেতাদের  চেয়েছেন সংগঠনের নেতারা। হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে সচিবালয়ে তার অফিসে দেখা করে বন্দি নেতা-কর্মীদের নিজেদের জিম্মায় জামিনের ব্যবস্থা করার আবদার করেছে।

 দুপুর ২টা হতে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলা বৈঠক শেষে কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি।

বৈঠকে হেফাজত নেতারা সংগঠন এবং পরিবারের পক্ষ হতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন যে, বন্দি নেতাদের  দেওয়া হলে তারা কওমি মাদ্রাসায় কোনো ধরনের রাজনীতিতে জড়াবে না। এই টাইম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজত নেতাদের জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে আমরা আরও অলোচনা করব, যা হবে আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ মোংলা বন্দরে সার বোঝাই লাইটার জাহাজডুবি

বৈঠকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা ইয়াহিয়াসহ সংগঠনের ৬ জন সিনিয়র সদস্য অংশ নেন। অন্য নেতারা হলেন-দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান (দেওনার পীর), হেফাজত মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রীস ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ শাখার ডিআইজি নাফিউল ইসলাম, ঢাকা মহানগর  (ডিবি) বিভাগের শ্রেষ্ঠ একেএম হাফিজ আক্তার, র‌্যাবের  প্রধান লে. কর্নেল মশিউর রহমান ও সিআইডির একজন প্রতিনিধিসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি না করার ব্যাপারে কোম্পানি এবং পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অঙ্গীকার বা এই ব্যাপারে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়ে গিয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী সরাসরি ভাবে উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে এই প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের উত্তরে উনি বলেন, এসব বিষয়সহ অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। আমি সব বিষয়ে আপনাকে বলব না।

আরও পড়ুনঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল আজ

গোয়েন্দা সূত্র যুগান্তরকে জানায়, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন কমিয়ে আনা এবং কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির উদ্যোগের অংশ হিসাবে এই বৈঠক হয়েছে। হেফাজত নেতাদের মুক্তির বিষয়ে সরকারের তরফে বেশকিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। হেফাজত নেতারাও সেগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

জানতে চাইলে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী যুগান্তরকে বলেন, আমাদের যেসব নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন আমরা তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছি। লিখিতভাবে আমরা দাবিগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। উনি ব্যাপারটা আন্তরিকতার সাথে দেখবেন বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলাদাভাবে আমরা কারও বিষয়ে কথা বলিনি। যারাই জেলে আছেন সবার মুক্তি আবেদনই আমরা জানিয়েছি।

হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, কারাগারে স্বজনদের সাক্ষাতসহ নানারকম ব্যাপারে হয়রানি না করতে মৌখিকভাবে কথা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈঠকে হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে ২০১৩, ২০১৬ ও ২০২১ সালে করা সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ  হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ওলামায়ে কেরামদের মুক্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

এ ব্যতীত তিনি বন্দিদের সাথে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত বছর ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর কেন্দ্র করে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংসতার মামলায় সারাদেশে টানা গ্রেফতার অভিযানসহ নানামুখী চাপে পড়ে হেফাজত। এসব মামলায় হেফাজতের ৩০ নেতাসহ সারাদেশে এক হাজার ২৩০ জনেরও বেশি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বন্দিদের অধিকাংশই ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে জেলে আছেন। বন্দিরা কয়েদে থাকায় তাদের পরিবারগুলো সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে অবিলম্বে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বন্দিদের সঙ্গে পরিবারের লোকজনের সাক্ষাৎ এবং যোগাযোগের অ্যারেঞ্জমেন্ট করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow