মৃত্যুর সময় ঘটে মানুষের শরীরের কিছু পরিবর্তন

একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, তা আমরা সবাই জানি। জন্ম নেয়ার পর থেকেই আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হই। কিন্তু মৃত্যুর ঠিক আগে বা পরে আমাদের কী হয়, তা আমাদের সবারই অজানা।

Feb 6, 2023 - 19:53
 0
মৃত্যুর সময় ঘটে  মানুষের শরীরের কিছু পরিবর্তন

একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, তা আমরা সবাই জানি। জন্ম নেয়ার পর থেকেই আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হই। কিন্তু মৃত্যুর ঠিক আগে বা পরে আমাদের কী হয়, তা আমাদের সবারই অজানা।


মৃত্যুর পর কী হবে তা বলা না গেলেও মৃত্যুর ঠিক আগে কী ঘটে, তা নাকি এখন বলা সম্ভব। সম্প্রতি কানাডার এক দল গবেষক এমনটাই দাবি করছেন। তাদের গবেষণাপত্র ‘ফ্রনটিয়ার ইন এজিং নিউরোসায়েন্স’-এ উঠে এসেছে এমনসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এ গবেষণায় ৮৭ বছরের এক প্রবীণ, যিনি এপিলেপসিতে আক্রান্ত ছিলেন। তার নিউরোলজিক্যাল রেকর্ডিং করা হয়। রেকর্ডিংয়ের সময়ই হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে দেখা যায় তার মস্তিষ্ক এমনভাবে কাজ করছিল, যেন তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন বা স্মৃতি মনে করছিলেন।


এতদিন ভাবা হতো মৃত্যুর হিমশীতল ভুবন থেকে কেউ যেহেতু ফিরে আসেনি, সেহেতু মানুষ কোনোদিন জানতে পারবে না মৃত্যুর স্বাদ; কিন্তু বিজ্ঞানীরা কেন থেমে থাকবেন! শুরু হয়ে গেছে মৃত্যুকে জানতে ব্যাপক তোড়জোড়। যদিও এখন পর্যন্ত জানা হয়েছে খুবই কম। মৃত্যু নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন মৃত্যু বিশেষজ্ঞ নিউইয়র্ক শহরের উইল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারের গবেষক ড. সাম পার্নিয়া। সম্প্রতি পার্নিয়া ও তার সহকর্মীরা প্রকাশ করেছেন তাদের ৩ বছরের গবেষণার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। এই গবেষণা অডঅজঊ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইউরোপ, কানাডা ও ইউএসের ২৫টি মেডিকেল সেন্টারের ১৫০০ রোগী, যারা ‘কোমা অবস্থা’ থেকে ফিরে এসেছেন জীবনে, পার্নিয়া গবেষণা করেছেন মূলত তাদের নিয়ে।

পার্নিয়ার গবেষণা থেকে জানা যায় মৃত্যু মুহূর্তের কোনো ঘটনা নয়; হৃৎপি-ের কম্পন বন্ধ হলে ধীরে ধীরে জীবকোষগুলো ক্ষয় হতে শুরু করে। জীবকোষগুলো চলাচলে অক্ষম হতে থাকে আর সব ক্রিয়া বন্ধ হতে সময় লাগে ১০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। ওই সময়গুলোর অনুভূতি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তবে ১০ অথবা ২০ শতাংশ মানুষ যারা ‘কোমা অবস্

থা’ থেকে ফিরে এসেছেন, কিছুক্ষণ বা ঘণ্টা খানিক পর তিনি চেতন ফিরে পেয়ে কি দেখে এসেছেন সে বিষয়ে স্বকল্পিত বিবরণ দিতে পারেন। প্রায়-মৃত্যু থেকে ফিরে আসা রোগিদের অনেকে কোমা অবস্থায় নানামাত্রিক রঙের কারুকাজ দেখেছেন বলে মনে করেন। এই বিবরণ কতটা সত্য বা কতটা অলীক কিংবা মনের ভুল তা নিশ্চিত করে অবশ্য বলা সম্ভব নয়।

সাধারণভাবে মনে করা হয় মৃত্যু প্রাণীর জীবনে আচমকা এসে সবকিছু ল-ভ- করে দেয়; কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রে বলে মৃত হতে হলে প্রথমে হৃদয়ের কম্পন বন্ধ হতে হবে, ফুসফুস তার ক্রিয়া বন্ধ করবে, যার ফলে মস্তিষ্ক তার সব কাজ বন্ধ করে দেবে। ডাক্তার চোখের মণিতে আলো ফেললে যদি স্নায়ুর ওপর কোনো উদ্দীপনা সৃষ্টি না করে তবে তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর সময় প্রায় ৯০০ সেকেন্ড জুড়ে ঘটে চলা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা। আর তার মধ্যে মৃত্যুর আগের ও পরের ৩০ সেকেন্ড ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্ন দেখা, ধ্যান করা, নতুন ভাবনা চিন্তা করা কিংবা স্মৃতিচারণা করার মতো কাজগুলোর প্রতিটিতেই মস্তিষ্ক থেকে পরস্পর মৌলিক কিছু তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। সাধারণ ভাষায় একে ‘ব্রেন ওয়েভ’ বলে। এই ঘটনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিরীক্ষণ করে তাদের মত, মস্তিষ্ক জীবন থেকে মৃত্যুর এই যাত্রাটি সংঘটিত করে নিপুণ ভাবেই। মস্তিষ্কের শেষ কাজটি হলো মৃত্যুর মুহূর্তে জীবনের সব সুন্দর স্মৃতিগুলোকে এক লহমায় ফিরিয়ে দেওয়া। সুতরাং প্রিয়জনের মৃত্যুতে যখন বাইরের দুনিয়া শোকগ্রস্থ তখন হয়তো সেই মানুষটি নিজের জীবনের প্রিয়তম স্মৃতিতে ফিরে যাচ্ছেন। তবে এই আবিষ্কার নিয়ে ভবিষ্যতে আরো গবেষণা প্রয়োজন বলেই মত গবেষকদের।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow