মিউনিখে নজর কাড়ছে মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্য প্রদর্শনী

অনবদ্য ও নান্দনিক স্থাপত্যকর্ম দিয়ে আগেই স্থাপত্য প্রেমীদের হৃদয় জয় করেছিলেন মেরিনা তাবাসসুম।এখন জয় করছেন জার্মানি। মিউনিখে ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া তার স্থাপত্য প্রদর্শনীটি দেখেছেন প্রায় ২৫ হাজার দর্শক। চলবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত। মেরিনার স্থাপত্য প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে জার্মান দর্শক চিনছে বাংলাদেশকে।

Apr 20, 2023 - 13:11
 0
মিউনিখে নজর কাড়ছে মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্য প্রদর্শনী
ছবি: সংগৃহীত

দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয় কাচের দেয়ালে জ্বলজ্বল করা একটি বিশাল পোস্টার! শিরোনাম মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস : ইন বাংলাদেশ৷ জার্মানির মিউনিখে পিনাকোথেক ডার মডার্ন মিউজিয়ামে এ যেন একখণ্ড বাংলাদেশ! দর্শক ঘুরে ফিরে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখছেন মেরিনা তাবাসসুমের সৃষ্টিশীল কর্মযজ্ঞ।

তার স্থাপত্যগুলোর মধ্যে স্থানান্তরযোগ্য বাড়ি মুন্সীগঞ্জ-দোহার-বিক্রমপুর আলাদা দৃষ্টি কেড়েছে দর্শকের।জাদুঘরের প্রবেশ মুখে শোভা পাচ্ছে আস্ত বাড়িটি।

মেরিনার চিন্তাশীল কর্মে উপাদান থাকে বাংলাদেশের ইতিহাস, প্রকৃতি, জলবায়ু এবং সংস্কৃতি। কাজের মধ্যে অনুসন্ধানমূলক প্রক্রিয়ার ব্যবহারের জন্য তাকে সমকালীন সেরা স্থপতিদের একজন মনে করা হয়। চরের মানুষের জন্য তৈরি প্রমাণ সাইজের স্থানান্তরযোগ্য এ বাড়ির নকশা তৈরি হয় বাঁশ আর ইস্পাত দিয়ে।রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি জন পরিসর বা কমিউনিটি স্পেসের নমুনা প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য।

স্থানীয় পত্রিকাগুলোর খবরে জানা গেছে, তার স্থানান্তরযোগ্য বাড়ি তৈরির একটি ইতিহাস। বেশ কয়েক বছর আগে চর ও চরের মানুষদের নিয়ে একটা গবেষণা করেছিলেন মেরিনা। সে গবেষণার ভিত্তিতে দোহারে তৈরি এ রকম তিনটি বাড়ির নকশা ২০১৯ সালে শারজা বিয়েনালে প্রথম স্থান পায়। চরের মানুষের কথা ভেবে খুদে বাড়ির (ছোট বাড়ি) নকশা করেন। করোনার বিধিনিষেধে প্রথম এর নমুনা তৈরি করেছিলেন ঢাকায়।যমুনার চর হিজলায় পরপর আরও চারটি। সেগুলোও প্রদর্শনীতে রয়েছে।

৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি আয়োজন করতে সময় লেগেছে প্রায় এক বছর। মেরিনা ১৯৯৫ সালে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আরবানা। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রতিষ্ঠান মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস। ২৮ বছরের কর্মযাত্রায় মেরিনা সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য স্থাপত্য৷ তার উদ্ভাবনা থেকে বাছাই করা নকশা নিয়ে তিন কক্ষজুড়ে চলছে তার প্রথম একক প্রদর্শনী।

এটি ছবি, অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা আর বিরাটকায় বা ক্ষুদ্রাকার বিচিত্র স্থাপনা দিয়ে সাজানো হয়েছে৷ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ২০১৬ সালে আগা খান পুরস্কার পাওয়া ঢাকার দক্ষিণ খানের বায়তুরক রউফ মসজিদ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নির্মিত বাড়িসহ শহরতলি আর শহরের শতাধিক নকশা।

তার এই প্রদর্শনী দর্শকদের কাছে অর্থবহভাবে তুলে ধরতে কিউরেট করেছেন জার্মানির স্থাপত্য ইতিহাসবিদ ভেরা সিমোন বাডের৷ প্রদর্শনী উপলক্ষে মেরিনা তাবাসসুমের সৃষ্টিশীল কর্মযাত্রা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি বইও৷ ২০২০ সালে মেরিনা তাবাসসুম এই জাদুঘরে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তার কাছে জাদুঘরের পরিচালক একটি প্রদর্শনীর প্রস্তাব দেন৷ করোনায় তা সম্ভব হয়নি।

যদিও করোনা চলাকালে তিনি অনন্য এক সম্মাননা পেয়েছেন৷ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ তাকে সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার হাতে ডক্টরেট উপাধির অভিজ্ঞানপত্র তুলে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ১১ জুন মিউনিখে প্রদর্শনী সমাপ্ত হলে যাবে হল্যান্ডে রটারডামে৷ তারপর যাবে পর্তুগালের লিসবনে।মেরিনা প্রদর্শনীটি লন্ডন, নিউইয়র্কসহ আরও কয়েকটি শহরে নিয়ে যেতে চান।

উল্লেখ্য, মেরিনা তাবাসসুম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পুরস্কার (১৯৯৭), ভারতে সেরা স্থপতি পুরস্কার (২০০১), আর্নল্ড ডব্লিউ ব্রুনার মেমোরিয়াল প্রাইজ (২০২১), পুর্তগালে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ (২০২২) বেশ কয়েকটি সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow