ভোট এগোলে আন্দোলনের রোডম্যাপ বদলাবে বিএনপি
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে অপ্রস্তুত রেখে সংবিধান অনুযায়ী সরকার চলতি বছরের সুবিধাজনক সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতারা।
দলটির নীতিনির্ধারণী কমিটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমন আশঙ্কা থেকে চূড়ান্ত আন্দোলন এগিয়ে আনা এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে বিএনপি।
দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমাদের সময়কে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নানা চক্রান্তের কথা শুনতে পাচ্ছি। এও শুনতে পাচ্ছি, চলতি বছরের যে কোনো সময় তড়িঘড়ি করে সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের আন্দোলনেও গতি আনা হচ্ছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হলে, তা হবে সরকারের জন্য মরণফাঁদ।’
দলটির নেতারা বলেন, দেশের চলমান ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক’ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রতি মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনও বাড়ছে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাকে সরকারের কৌশল বলে মনে করছে বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে সরকারের শেষ সময়ে বিরোধী দলগুলো সর্বাত্মক আন্দোলনে নামে। তাদেরও সেই রকম প্রস্তুতি আছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিএনপির কাছে খবর এসেছে- সরকার জানুয়ারির তিন মাস আগে অর্থাৎ আগামী অক্টোবরে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। এতে বিএনপি অপ্রস্তুত থাকবে। আন্দোলন পরিকল্পনাও ভেস্তে যাবে।
এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নেতারাও সরকারের এমন পরিকল্পনার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি এক বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এক বছর আগেই নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তারা বলেন, সরকার কখনই চাইবে না বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতি রাখুক। তাই এমন সময় সরকার নির্বাচন করতে চাইবে যখন বিএনপির পরিকল্পনা হঠাৎ পরিবর্তন করতে হয়।
_____________________________________________________________________________
আরও পড়ুনঃ ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর : ডেরেক এইচ শোলেট
_____________________________________________________________________________
দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারের এমন ভাবনা জানার পর বিএনপি আন্দোলনের সময় নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। যে কোনো সময় আন্দোলনে নামতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত রাখতে ধারাবাহিকভাবে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন আগে হোক আর পরে হোক- সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না। আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, সেভাবে এগোচ্ছি।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন অনেক নেতা। আবার প্রভাবশালী নেতাদের আবদার ও কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়েও অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নানা অভিযোগে দুই শতাধিক নেতা বহিষ্কার অবস্থায় আছেন। তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিশন গঠন করার কথা ভাবছে বিএনপি। এই কমিশন অপরাধের ধরন বিবেচনা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করবে। এর ভিত্তিতে দলের শীর্ষ নেতার অনুমতিক্রমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার এই প্রথম স্থায়ী কমিটির সভায় যুক্ত হয়েছেন তিনি। ভারতে অনুপ্রবেশের অপরাধে দায়েরকৃত মামলার জটে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে আছেন সালাহউদ্দিন।
সালাহউদ্দিন ঘনিষ্ঠ সূত্র আরও জানান, স্থায়ী কমিটির সভায় যুক্ত হওয়ার পর অন্য সদস্যরা তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। কুশলাদি বিনিময় ছাড়া তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে তেমন কোনো কথা বলেননি।
______________________________________________________
আরও পড়ুনঃ হার মানতে নারাজ , আদালতে যাবে হির আলম
______________________________________________________
২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ করার সময় ওই বছরের ১১ মে তাকে আটক করে শিলং পুলিশ। তার নামে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা করা হয়।
What's Your Reaction?