এই প্রথম ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম

সারাদেশের সব বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬ষ্ঠ ও সপ্তম ক্লাসে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নব শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পাঠদান চালু হতে যাচ্ছে

Dec 22, 2022 - 13:06
 0
এই   প্রথম ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম
মূলত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর আলোকে এই পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হবে

সারাদেশের সব বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬ষ্ঠ ও সপ্তম ক্লাসে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নব শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পাঠদান চালু হতে যাচ্ছে। মূলত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর আলোকে এই পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হবে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আজ শনিবার থেকে জেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের ১ম ব্যাচের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। ঢাকা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ছয় দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবে জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে এরই ভিতরে এনসিটিবি মনোনীত শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এনসিটিবি-সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষাসহ মোট ১০টি ব্যপার রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ক্লাসের ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও পরীক্ষার দ্বারা শিখন ফল প্রস্তুত করা হবে শিক্ষার্থীদের। যদিও এর মধ্যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হিসেবে যারা কর্মরত আছেন, তাদের অনেকেই বাস্তবিক নানা কারণে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নন। এমনিতে যে কোনো একটি ব্যাপারে পটু শিক্ষকরাই ওই বিষয়ে ক্লাস নেবেন এতদিন তেমনটাই ছিল নিয়ম। তা সত্ত্বেও লক্ষ্য যাচ্ছে, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষকরা পর্যাপ্ত সময় ইংরেজি পড়াচ্ছেন বা কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষক পড়াচ্ছেন গণিত। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হলেও বিভিন্ন ব্যপার পড়ানোর জন্য ১টি বিষয়ে একাধিক শিক্ষক থাকতে হবে। এই জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকশূন্যতা পূর্ণ করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলার শিক্ষকদের পাঠদানের ব্যপার হবে বাংলা। ইংলিশ শিক্ষকদের ইংরেজি, অঙ্কশাস্ত্র শিক্ষকদের গণিত, ভৌতবিজ্ঞান এবং বায়োলজির শিক্ষকদের বিষয় হবে বিজ্ঞান। ইতিহাস এবং সোশাল সাইন্স পড়াবেন ভূগোল শিক্ষকরা। আবার ভৌতবিজ্ঞান বা আইসিটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিষয় হবে আধুনিক প্রযুক্তি। কৃষি এবং ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকদের পাঠদান করতে হবে ওই দুই বিষয়ে। শারীরিক শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও বায়োলজির শিক্ষকদের নতুন বিষয় হবে শরীর সুরক্ষা। ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষকরা পড়াবেন ধর্মশিক্ষা। চারু এবং কারুকলা বিষয়ে শিক্ষকদের নতুন বিষয় হবে শিল্প ও সংস্কৃতি।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিতের তাগিদ দেন শিক্ষাবিদ ড. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকদের এমনিতেই ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকার তো প্রশ্নই আসে না। সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় বিদ্যমান ভিন্ন ধরনের সমস্যা। ঢাকাসহ রাষ্ট্রের বড় বড় শহর এবং অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অঞ্চলে অবস্থিত সরকারি বিদ্যালয়গুলোয় আছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক। কিন্তু গ্রাম এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় দরকারের তুলনায় শিক্ষক কম। তার ওপর খোদ রাজধানীর মাধ্যমিক স্কুলে বিষয়ভিত্তিক  অনুসারে শিক্ষক পদায়ন করা নেই। এসব স্কুলে এক বিষয়ের শিক্ষক আরেক বিষয়ের  নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এইখানে নতুন শিক্ষাক্রম কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সন্দিহান খোদ শিক্ষকরাই।

মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা প্রশিক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নব শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণবিহীন কোনো শিক্ষক আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর আর শ্রেণি নিতে পারবেন না। ডিসেম্বরের পূর্বেই ঢাকার স্কুলগুলোর শিক্ষকদের বিষয় সমন্বয় করা হবে।

যদিও পাইলট প্রকল্পের আওতায় অধুনা মাত্র ৬২ স্কুলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের একটি নমুনা দেখানো হচ্ছে। যদিও প্রথম দিকে ১০০টি করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল বাছাই করে নব শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটি সম্ভব হয়নি। এখন মাত্র ৬২টি বিদ্যালয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ৩৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক সঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। আমাদের নব কারিক্যুলাম তৈরি হয়েছে। আজকাল ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ ক্লাসে সেটা পাইলটিং (পরীক্ষামূলক) চলছে। তার ফিডব্যাক অনেক ভালো। ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করা যতটা সহজ, ৩৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেটি বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। কারণ এতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রায় চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি করা হয়েছে। কারণ শিক্ষকরা এত দিন যে আঙ্গিকে পাঠদান পরিচালনা করেছেন, এখন সম্পূর্ণ আরেক আঙ্গিকে তাদের শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সে জন্য শিক্ষকদের প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সেই প্রস্তুতির ভাগ হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু এই কার্যক্রম প্রচুর সময়সাপেক্ষ। ফলে শিক্ষক প্রশিক্ষণে অনুমেয় সময় বেশি ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow