শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি আজ
ঢাকা : আজ শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে পূর্বের আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের এক-দশমাংশ আয়তনজুড়ে তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। সেখানে উপজাতি জনগোষ্ঠী নিজ নিজ ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির স্বকীয়তা বজায় রেখে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জনগোষ্ঠীর একসাথে বসবাস করে আসছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চল স্বাধীনতা-পূর্বকালে ছিল পশ্চাৎপদ ও অনুন্নত।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে এই এলাকা উন্নয়নের গতিধারায় জয়েন হচ্ছিল। অথচ ১৯৭৫ বর্ষের ১৫ আগস্ট কুচক্রীদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ওই অঞ্চলের বহুমুখী উন্নতি প্রস্তুতি ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়নের এই অচলাবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণে প্রায় দুই যুগব্যাপী স্থায়ী হয়।
১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়ী হলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা সাহসী প্রচেষ্টা করে পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সেখানকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসেন। ১৯৯৬ বছরের অক্টোবরে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় পরিচালক সভা গঠিত হয়।
একই সালের ডিসেম্বরে খাগড়াছড়ির সার্কিট হাউজে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও সরকারের ভিতরে ১ম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেশের একাধিপত্য এবং অখণ্ডতা অক্ষুণ্ন রেখে সংবিধানের আওতায় এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই উপজাতীয় জনগণের ন্যায়সংগত দাবি পূরণের সম্ভাব্য সর্বোত্তম সমাধান খুঁজতে উভয়পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণে ও প্রচেষ্টায় জাতীয় ও জেএসএসের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৭ম বৈঠকে চূড়ান্ত সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৯৭ বর্ষের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলন ঘরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক অফিসার এবং বৈদেশিক কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে জেএসএসের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সই করেন। , যেটাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি জানানো হয়ে থাকে।
কোন তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই শান্তিচুক্তি হয়। এ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংগ্রাম থেকে সরে আসে শান্তিবাহিনী এবং তাদের সশস্ত্র আন্দোলনকারী সদস্যরা স্বাভাবিক জীবন বেছে নেয়। তারা অস্ত্র জমা দেয় এবং তাদের কমন ক্ষমা ঘোষণা করে সরকার।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আরাম চুক্তির ফলে পার্বত্য জেলাগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম হয়েছে।
তিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি দিবস ২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে এই কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি দিবস ২০২২’ পালনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ বছর দিবসটির রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আমি বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।’
What's Your Reaction?