চীনের পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ
ইতোমধ্যে চীনের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার (২৭ নভেম্বর) সাংহাইয়ে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
চীনে সরকারের কঠোর কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিপক্ষে বিক্ষোভের তীব্রতা বেড়েছে। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর সাংহাইতে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এইরকম বিভিন্ন শহরে রাজপথে নামতে চালু করেছে মানুষ। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই বার্তা জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এক দশক প্রথমে চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শি জিনপিং। তার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশটির মৌলিক ভূখণ্ডে এরূপ বিক্ষোভ নজিরবিহীন।
চীনে ১ম কোভিড শনাক্ত হওয়ার তিন বছর পরও সরকারের কঠোর করোনাবিধি মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। সম্প্রতি দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত নগর উরুমকিতে ১টি বহুতল ভবনে অগ্নি লেগে ১০ জনের মরণ হয়। এ ঘটনায় লকডাউনের বিধিনিষেধকে দায়ী করেন স্থানীয়রা। মূলত ওই ঘটনা থেকেই বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। দেশজুড়ে নানারকম স্থানে রাজপথে নেমে গর্ভনমেন্টের কোভিড কন্ট্রোল ব্যবস্থার বিপক্ষে আওয়াজ তুলতে চালু করে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ।
বিবিসি জানিয়েছে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সাংহাই শহরের রাস্তায় নেমে আসে। একপর্যায়ে সেখানে লোকজনকে জোর করে পুলিশের গাড়িতে তোলা শুরু হয়। রাজধানী বেইজিং ও নানজিংয়েও বিপুল বিক্ষোভ হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে শামিল হয়েছে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও।
সাংহাইতে বিক্ষোভকারীদের প্রকাশ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টিকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দেওয়ার জন্য দেখা গেছে। অনেকে ফাঁকা সাদা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। উরুমকির মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কারও হাতে ছিল মোমবাতি, কেউ হাতে তুলে নেন ফুল।
সাংহাইতে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের একজন শন জিয়াও। রয়টার্সের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি এইখানে এসেছি। কারণ আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, কিন্তু সরকারকে না। আমি স্বাধীনভাবে বাইরে যেতে চাই, কিন্তু সেটা পারছি না। আমাদের কোভিড বিধান ১টি খেলা। এটা বিজ্ঞান বা বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে নয়।’
সাংহাইয়ের একজন বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেছেন, রাস্তায় বিক্ষোভ দেখে উনি চমকে গেছেন এবং কিছুটা উত্তেজিত বোধ করেছেন। চীনে এতো বড় মাপের ভিন্নমতের পাবলিশ উনি এই ১ম দেখেছেন বলা হয়ে থাকে মন্তব্য করেন।
একজন নারী বিক্ষোভকারী বিবিসিকে জানান, তিনি পুলিশ অফিসারদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তারা এই বিক্ষোভ সম্পর্কে কী মনে করেন, উত্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তার মন্তব্য ছিল, ‘আপনার মতোই।’
একজন প্রতিবাদকারী বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, ঘটনাস্থলে থাকা তার এক বন্ধুকে পুলিশ মারধর করেছে। ভিন্ন দুজনের চোখে গোলমরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়েছে।
চীনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বা স্লোগান দেওয়ার ঘটনা বিরল। দেশটির বিধান অনুযায়ী, সরকার এবং প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সরাসরি ভাবে সমালোচনাকারীদের কঠোর শাস্তির আইন রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিচালকবৃন্দ হয়তো কঠোর জিরো কোভিড নীতির প্রতি মানুষের ক্ষোভের মাত্রা অনুধাবনে অসমর্থ হয়েছে। সম্প্রতি এই নিয়ম হতে পিছু না হটার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
What's Your Reaction?