হাল ছাড়েনি বিশ্বাস নিয়ে এগিয়েছি : দেলোয়ার আহমেদ

বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে প্রতিটি প্রবাসী পাড়ি জমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, উদ্দেশ্য একটি নিজের পরিবারকে ভালো রাখা এবং নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তিত করা । এমন অনেক প্রবাসী রয়েছেন যার অনেক সংগ্রাম কষ্টের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন ।

Nov 27, 2022 - 20:59
Nov 28, 2022 - 03:33
 0
হাল ছাড়েনি বিশ্বাস নিয়ে এগিয়েছি : দেলোয়ার আহমেদ
দেলোয়ার আহমেদ

বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে প্রতিটি প্রবাসী পাড়ি জমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, উদ্দেশ্য একটি নিজের পরিবারকে ভালো রাখা এবং নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তিত করা । এমন অনেক প্রবাসী রয়েছেন যারা অনেক সংগ্রাম কষ্টের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন ।

এমনই স্বপ্ন নিয়ে ২০০০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান দেলোয়ার আহমেদ যিনি কিনা নানান ধাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন ।

 

প্রবাসীদের আওয়াজ

এ পর্বে আমরা কথা বলবো প্রবাসী দেলোয়ার আহমেদ এর সাথে।

 

প্রবাসী জীবন শুরু হওয়ার আগের ছোটবেলার জীবন সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাই ?

দেলোয়ার আহমেদ : আমার বয়স যখন চার থেকে পাঁচ বছর যখন আমার বাবা মারা যায়, আমরা দুই ভাই, দুই বোন, আমি পরিবারের সবাই ছোট আমি।

স্বাভাবিকভাবেই বাবা হারা অবস্থায় বেড়ে ওঠা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার কারণ আমার বড় ভাই তখনও কাজ করার উপযুক্ত হয়নি পরিবারে হাল ধরার মতো তেমন কেউই ছিল না তাই সব কষ্ট দায়ভার আমার মাকে নিতে হয়েছে আমাদেরকে আগলে রেখেছেন আমাদের মা,  আমাদের চার ভাই বোনকে লেখাপড়া করিয়েছেন ।

আসলে ছোটবেলা থেকে আমি নিজে ছোটখাটো কাজ করে উপার্জন করেছি। কোন কাজ কে কখনো ছোট করে দেখিনি যখন যে অবস্থায় ছিলাম সেভাবেই নিজে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি।

এভাবেই জীবনের সংগ্রাম ছোটবেলা থেকে শুরু হয়েছে।

 

কিভাবে শুরু করেছিলেন আপনার প্রবাসী জীবন ?

দেলোয়ার আহমেদ : এএসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর দেশের বাহিরে গিয়ে কিছু করার আমার খুব ইচ্ছা ছিল তাই ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়ে 2000 সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসি।

মাতৃভূমি ছেড়ে অচেনা অজানা দেশে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা পরিবারকে ভালো রাখার ইচ্ছা আসলে প্রতিটা প্রবাসী হয়, পরিবার আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আমিও সেই স্বপ্ন নিয়ে এ দেশে এসেছি এবং শুরুটা ছিল খুবই কষ্টদায়ক।

বলা হয় জীবনের শুরুটা কষ্ট না হলে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছানো সম্ভব হয় না সে কথাটা আসলে মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল যখন কষ্ট পাচ্ছিলাম এবং কষ্ট করছিলাম এবং তার সাথে প্রতিনিয়ত নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা মেধা শ্রম কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।

প্রবাস জীবনে আপনার প্রথম কোন পেশায় কাজ করতে হয়েছে ?

দেলোয়ার আহমেদ : আসলে বোঝার পর থেকে ড্রাইভিং এর প্রতি আমার খুবই শখ ছিল আর বাংলাদেশ থেকে এখানে আসার আগ পর্যন্ত আমি ড্রাইভিং করতাম অতএব যখন আমি প্রবাস জীবনের কথা চিন্তা করেছি তখনও আমার পেশা হিসাবে ডাইভিংয়ে আমি নির্বাচন করেছি এখানে এসে প্রথমে আমার যাত্রা শুরু করতে হয় ডাইভিং  পেশায় তবে যেমনটা বলেছিলাম শুরুটা আসলে ততটা সহজ ছিল না কারণ অচেনা এক দেশের নিজের স্বপ্ন নিয়ে আসা ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে তবে যখন এখানে আসা হলো যেমনটা চিন্তা করা হয়েছিল তার কোনো কিছুই বাস্তবে মিল ছিল না শুধু ড্রাইভিং আমার পেশা সেটাই আমি পেয়েছি তবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যে সহজ ছিল না সেটা এখানে আসার পরে আমি বুঝতে পেরেছি। 

 

কি ধরনের চ্যালেঞ্জের পড়েছিলেন প্রথমে এসে ?

দেলোয়ার আহমেদ : আসলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যখন আমি আসি তখন সর্বপ্রথম যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় সেটি হচ্ছে কোন ধরনের সিডিউল ছাড়া রাত দিন ডিউটি কখন কোন মুহূর্তে কাজ আছে সেটা বলা খুবই কঠিন ছিল, তাছাড়া সবচেয়ে বড় হতাশাজনক যে বিষয়টি ছিল তা হল সেলারি । 

যে পরিমাণ ডিউটি ছিল সেই তুলনায় আমার স্যালারি টা ছিল খুবই নগণ্য যা দিয়ে পরিবারকে খুব একটা ভালো রাখো কখনো সম্ভব হতো না।

তাছাড়া আমি যার মাধ্যমে এসেছি সে যা কথা দিয়েছিল সে কথা মত কিছুই আমি এখানে এসে পাইনি হলে প্রবাস জীবনের শুরুতেই হয় অনেকটা অন্ধকারময়।

আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কখনো হাল ছাড়িনি তখনকার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি এবং সর্বদাই চেষ্টা চালিয়েছে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে।

 

কিভাবে আপনি ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন ?

দেলোয়ার আহমেদ :  প্রবাস জীবনের তিন বছর অতিক্রম হওয়ার পর আমার যে (কপিল) আরবি মালিক তাকে বুঝাতে সক্ষম হই এবং তার প্রতিষ্ঠানে থেকে বাহিরে গিয়ে কিছু করার ইচ্ছে আছে সে বিষয়টা তাকে বলি সে অনুযায়ী সে আমাকে সুযোগ দেন এবং আমি আমার স্বপ্নের প্রথম ধাপ শুরু করি।

 

প্রথমে কি ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছিলেন ?

দেলোয়ার আহমেদ :  সর্বপ্রথম আমি একটি ছোট লন্ড্রি শোরুম চালু করি যেখানে আমার কর্মস্থল ছিল সেখান থেকে একটু দূরেই ছোটখাটো একটি মার্কেটে।  আর যেহেতু আমি উন্মুক্ত ছিলাম তাই বছর খানেকের মধ্যেই নিজের অবস্থান নিজের ব্যবসা কি আরও এগিয়ে নিতে সক্ষম হই।

সেই থেকে শুরু হয়েছে  স্বপ্নের পথে যাত্রা লন্ড্রির শোরুম  পর রাস আল খাইমাহ যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ষষ্ঠ বৃহৎ শহর সেখানে আমি আমার দ্বিতীয় ব্যবসা শুরু করি তা হল রেস্টুরেন্ট ।

রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করার পর থেকে প্রতিনিয়ত আমার স্বপ্ন যাত্রা আরো দ্রুতগতিতে এগোতে থাকে।

2000 সাল  বর্তমান পর্যন্ত সময়ের সাথে মিল রেখে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি তার মধ্যেও  উল্লখ্য

লন্ড্রি শোরুম, রেস্টুরেন্ট, কনস্ট্রাক্টিং এন্ড সাপ্লায়ার, বোরকার শোরুম, কাপড়ের শোরুম, 

এগুলো ছাড়াও বর্তমানে আমার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে এমব্রয়ডারি ফ্যাক্টরি রয়েছে দুবাই মেইন শহরে সুপার শপ হোলসেল কাপড়ের দোকান রয়েছে ।

 

শুনেছি আপনার মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসেছেন ?

দেলোয়ার আহমেদ :  হ্যাঁ আসলে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমার ব্যবসার পাশাপাশি আমি প্রায় দুই হাজারের অধিক বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান পাকিস্তানি কে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা পেতে সহযোগিতা করেছেন।

 

প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলতে চান?

দেলোয়ার আহমেদ :  আমি সকল প্রবাসী ভাইদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই জীবনে কোনো কিছু অর্জন করা এতটা সহজ নয় যতটা সহজ মনে করে আমরা দেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হই এবং খুব সহজেই সফলতা পাওয়া পৃথিবীর কোথাও সম্ভব নয় সফলতা পেতে হলে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে যে পরিস্থিতিতে যেভাবে থাকা দরকার ঠিক সেভাবেই থাকতে হবে এবং নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা  মাধ্যমে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

 

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

দেলোয়ার আহমেদ :  আমি বাগো নিউজ কে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার জীবনের কিছু অংশ সবার মাঝে তুলে ধরার জন্য।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow