পিলখানা ট্রাজেডির ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া
পিলখানা ট্রাজেডির ১৪টি বছর পার হয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া। হত্যা মামলার বিচার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য থাকলেও বিষ্ফোরক মামলা এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে বিচারিক আদালতে।
পিলখানা ট্রাজেডির ১৪টি বছর পার হয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া। হত্যা মামলার বিচার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য থাকলেও বিষ্ফোরক মামলা এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে বিচারিক আদালতে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানরা নারকীয় তাণ্ডব চালায় পিলখানায়। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন। বিডিআর বিদ্রোহের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার করে।
পিলখানার ভেতর থেকে ভেসে আসে গুলির শব্দ
- ২০০৯ সালের ২৫শে ফেরুয়ারি বুধবার। সকাল ৯ টা ২৭ মিনিট। পিলখানার ভেতর থেকে ভেসে আসে গুলির শব্দ। অনেকেই ভেবেছিলেন নিয়মিত মহড়া। কিন্ত ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই জানা যায় বিদ্রোহের ঘটনা।
- সেদিন বিডিআর সদর দপ্তরে ছিল বার্ষিক দরবার। একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক দরবার হলে ঢুকে, কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
- বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো পিলখানায়। শুরু হয় তাণ্ডব। চলে সেনা কর্মকর্তাসহ তাদের পরিবারকে নির্যাতন, জিম্মি, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা। হত্যা করা হয়য় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে।
- খবর পেয়ে সাভার ও ঢাকা সেনানিবাস থেকে সাঁজোয়া যান এবং ভারী অস্ত্র নিয়ে পিলখানার দিকে রওয়ানা হন সেনাসদস্যরা। বেলা ১১টার মধ্যেই তারা ধানমন্ডি ও নীলক্ষেত মোড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেন। দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাদাপতাকা নিয়ে পিলখানার ৪ নম্বর ফটকের সামনে যান যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আজম।
- বিকেলে বিদ্রোহী সদস্যরা ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে তাদের দাবির কথা জানাতে যান প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। চলে বৈঠক। রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র সমর্পন করে কিছু বিডিআর সদস্য। জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে আসেন বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার।
- ২৬ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর আহবানে বিদ্রোহী জওয়ানেরা অস্ত্র সমর্পণে সাড়া দেয়ার পর ২৭শে ফেরুয়ারি সন্ধ্যায় পিলখানার ভেতরে ঢোকে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় বন্দী সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যদের মৃতদেহ। একটি রক্তাক্ত অধ্যায়ে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর তিনটি দিন।
বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। দীর্ঘ বিচার ও রায় শেষে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
তবে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের করা আপিল শুনানি শুরু না হওয়ায় হত্যা মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি আজও।
What's Your Reaction?