ইউক্রেনে আধুনিক ট্যাংক পাঠাতে অবশেষে প্রস্তুত আমেরিকা ও জার্মানি
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ইউক্রেনে লিওপার্ড-২ ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোর কাছে থাকা এ ট্যাংকও কিয়েভে পাঠানোর অনুমতি দেবে দেশটি। খবর বিবিসির।
বেশ কয়েকমাস যাবত সিদ্ধান্তহীনতার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব ট্যাংক ইউক্রেনের হাতে আসলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যেতে পারে বলে তারা আশা করছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি দিয়েছে এ খবর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অন্তত ৩০টি এম ওয়ান আব্রামস ট্যাঙ্ক পাঠানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করবে বলে জানা যাচ্ছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ অন্তত ১৪টি লেপার্ড টু ট্যাঙ্ক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এসব খবরকে ‘সরাসরি উস্কানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ট্যাংক যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার কাছে হারানো এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে। ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠনোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এতোদিন ধরে দেশের ভেতরে এবং বাইরে নানা চাপ উপেক্ষা করেছে।
ওয়াশিংটন বলছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আব্রামস ট্যাংক পরিচালনার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষন এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। অন্যদিকে বার্লিন আশংকা করছে ট্যাংক সরবরাহের মাধ্যমে ন্যাটো রাশিয়ার বিপক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে।
এ ধরণের অস্ত্রের বহর ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম বলছে, জার্মানির তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছিল যে ওয়াশিংটন যদি এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠায় তাহলে জার্মানিও লেপার্ড টু ট্যাংক পাঠাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৩০টি ট্যাংক পাঠানো হতে পারে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ গত বছর থেকে লেপার্ড টু ট্যাঙ্ক পাঠানো নিয়ে চাপের মুখে রয়েছেন
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর এবং বাইডেনের সহযোগী ক্রিস কুনস সংবাদ মাধ্যম পলিটিকোকে বলেন, “যদি জার্মানরা বলে যে, আমেরিকানরা আব্রামস পাঠালে তারা লেপার্ড পাঠাবে তাহলে আমাদের আব্রামস পাঠানো দরকার।”
ব্রিটেন এরইমধ্যে বলেছে যে তারা ইউক্রেনে চ্যালেঞ্জার টু ট্যাঙ্ক পাঠাবে। পোল্যান্ড এই সপ্তাহে বলেছে যে, তারা লেপার্ড টু ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠাতে চায়। এসব ট্যাংক যেহেতু জার্মানিতে তৈরি, তাই বার্লিনকে তাদের রপ্তানির অনুমোদন দিতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের তথ্য অনুসারে, অন্তত ১৬টি ইউরোপীয় ও ন্যাটোভুক্ত দেশের কাছে লেপার্ড টু ট্যাঙ্ক রয়েছে। এদের সবাই ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠাবে না। কিন্তু শুলজের আপাত সিদ্ধান্তের অর্থ হল তারা চাইলেই পাঠাতে পারে।
বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক করেসপনডেন্ট জনাথন বিয়েল বলেন, ইউক্রেনের বিশ্বাস, ৩০০ আধুনিক ট্যাংক পেলে তারা যুদ্ধে জিততে পারবে। কিন্তু তাদের প্রয়োজন মতো ট্যাংক পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করেন বিয়েল।
কিন্তু যদি আধা ডজন পশ্চিমা দেশের প্রত্যেকে ১৪টি করে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করে, তাহলে এটি ট্যাঙ্কের সংখ্যা প্রায় একশর কাছাকাছি নিয়ে যাবে, যা যুদ্ধে পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
বিয়েল বলেন, যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার টু, জার্মানির লেপার্ড টু এবং যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামসসহ পশ্চিমা ট্যাঙ্কগুলো সোভিয়েত যুগের একই ধরণের ট্যাঙ্ক যেমন টি-সেভেনটি টুয়ের চেয়ে উচ্চমানের। এই ট্যাঙ্কগুলো ইউক্রেনীয় বাহিনীর সদস্যদের আরও বেশি সুরক্ষা, গতি এবং নির্ভুলতা দেবে।
কিন্তু পশ্চিমা আধুনিক প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্কগুলি নিজেরাই কোনো বিস্ময়কর অস্ত্র বা গেম-চেঞ্জার নয়। বরং সেগুলোর সাথে অন্য কী ধরণের অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা।
সাম্প্রতি পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ভারী অস্ত্রে পরিবর্তন এসেছে। আরো শত শত সাঁজোয়া যান, আর্টিলারি সিস্টেম এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাশিয়ানদেরকে প্রতিহত করে পিছু হটিয়ে দখলকৃত এলাকা পুনরুদ্ধারে মিলিতভাবে এ ধরণের অস্ত্রই দরকার।
যদি ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় এবং সময়মতো অস্ত্র সরবরাহ করা হয়, তাহলে তারা আসছে বসন্তে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
What's Your Reaction?