বলা হয় মৃত্যু ব্যতীত শকল রগের ওষুধ কালজিরা
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর হতে মসলা ও ঔষধি গাছ সংখ্যায় বিপুল সনামধন্য একটি নাম কালজিরা
কালোজিরা অতি জনপ্রিয় ও সুপরিচিত ১টি ফসলের নাম। কালিজিরা বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa L, Ranunculaceae, পরিবারভুক্ত বর্ষজীবী, বীরুৎ জাতীয় একটি উদ্ভিদ। Nigella sativa কে আরবি ভাষায় জানানো হয়ে যায় হাব্বাত-আল-বারাকাহ অর্থাৎ আশীর্বাদপুষ্ট বীজ, যার ফল শুষ্ক বীজকোষ সংখ্যায় পরিচিত।
মিসরের আগের ভূপতি টুট রেডের সমাধি থেকে কালিজিরা আবিষ্কৃত হয় ও সে কালে এটি পরকালে ব্যবহার করা হবে বলা হয়ে থাকে আস্থা করা হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর হতে কালিজিরা মসলা ও ঔষধি গাছ সংখ্যায় বিপুল সনামধন্য একটি নাম। বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ক্যানন অব মেডিসিন’ এ ‘কালোজিরা দেহের প্রাণশক্তি বাড়ায় ও কষ্ট মুছে করে’ উল্লেখ করেছেন।
শ্রেষ্ঠ এই ফসলের গুণাগুণ প্রায় কিংবদন্তির মতো ও কিছু দিন আগে পশ্চিমা দেশগুলোর চিকিৎসায় এর মর্যাদা দিন দিন পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। এ ফসলটির আবির্ভাব মূলত পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং মধ্য প্রাচ্য থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত। কালিজিরা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মিসর, ইরাক, সিরিয়া, ইরান, জাপান, চীন, তুরস্ক (শিওয়ে, ২০১১) ইত্যাদি দেশে চাষাবাদ হয়ে থাকে। জগতে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ টন কালিজিরা উৎপন্ন হয়।
১।স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিঃ
এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত খাবেন। যা আপনার দুশ্চিন্ত মুছে করবে। এছাড়াও এটি মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই ১টি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির দ্বারা ভাবা শক্তি বাড়িয়ে তুলতে হেল্প করে।
২।মাথা ব্যাথা নিরাময়েঃ
১/২ চা চামচ কালোজিরা তেল মাথায় পরিষ্কারভাবে লাগাতে হবে এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে ২/৩ সপ্তাহ খেলে মাথা ব্যথায় উপকার পাবেন।
৩।সর্দি সারাতেঃ
এক চা চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার খেতে হবে ও মাথায় ও ঘাড়ে রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মালিশ করতে হবে। এছাড়াও এক চা-চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি মুছে হবে।
৪।বাতের ব্যাথা দূরীকরণেঃ
আক্রান্ত স্থানে ধুয়ে ক্লিয়ার করে তাতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন কল্যাণ পাবেন। এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ কালোজিরা সমপরিমান মধু মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খেলে সাহায্য পাবেন।
৫।হার্টের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রেঃ
এক চা চামচ কালোজিরার গুড়া এক কাপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে ৪/৫ সপ্তাহ খেলে সাহায্য পাবেন।
৬।ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখতেঃ
প্রতিদিন প্রভাতে রসুনের দুইটা কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমুদয় অঙ্গে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূয্যির তাপে অন্তুত আধাঘন্টা অবস্থান করতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৭।পাইলস প্রবলেম নিরাময়েঃ
এক চা-চামচ মাখন এবং সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা চামচ কালোজিরার তেল সহ ডেইলি খালি পেটে ৩/৪ সপ্তাহ খেলে হিতকর পাবেন।
৮।শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতে:
যারা হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বহু উপকারী। দৈনিক কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস দুঃখ জনিত সমস্যা উপশম করে।
৯।ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ
ডায়াবেটিস রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালোজিরা। এক চিমটি হিসাব কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন প্রভাতে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও রং চা বা গরম ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে খেলে হিতকর পাবেন।
১০।যৌন সমস্যা সমাধান করেঃ
কালোজিরা মানবী পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়ায় ও যৌন সমস্যা প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন কালোজিরা খাদ্যে সাথে খেলে পুরুষের বীর্য পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা হতে মুক্তির সম্ভাবনা প্রস্তুত করে। এক চা চামচ মাখন,এক চা চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরা ও মধুসহ দৈনিক ৩ বার ৪/৫ সপ্তাহ খেলে অনুগ্রহ পাবেন।
১২।অনিয়মিত মাসিক সমস্যায়ঃ
এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে খেলে কার্যকারীতা বুঝতে পারবেন।
১৩।বুকের দুধ বৃদ্ধি করতেঃ
যেসব মায়েদের অন্তরে প্রচুর দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালিজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার প্রথমে ৫-১০ গ্রাম কালিজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের নির্ঝর বেড়ে যাবে।
১৪।আমাশয় নিরাময়েঃ
আমাশয় রোগের সেবা করতে কালোজিরার ব্যবহার পর্যাপ্ত পুরোনো। এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু সহ দিনে ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খাবেন।
১৫।শিশুর দৈহিক এবং মানসিক বৃদ্ধি করতেঃ
দুই সালের বেশি বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে এটি। তবে দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা কর্তব্য নয়।
সব শেষে বলা যায়
প্রকৃতি আমাদের সকল স্যমসার সমাধান আগে থকেই দিয়েছেন যার গুনাগুন জানা থাকলে আমরা আমাদের সব প্রয়জনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে পারি । তাই হয়ত বিস্ময়কর এই জিনিসটির প্রশংসা করেছেন খোদ রাসুল (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-
“তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আসা-ম' হলো মৃত্যু।”
(মুসলিম, হাদিস : ৫৬৫৯)
What's Your Reaction?