চট্টগ্রামে ২৯ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে চট্টগ্রামের ভাষায় বলেন, অনারা কেন আছোন, বেআইক্কোন গম আছোননি, তোয়ারার লাই পেট ফোরের (আপনারা কেমন আছেন, সবাই কি ভালো আছেন, আপনাদের জন্য আমার মন কাঁদে)।

Dec 4, 2022 - 20:35
Dec 13, 2022 - 16:56
 0
চট্টগ্রামে ২৯ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৪০ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মাটিতে আবার যেন কোনো যুদ্ধপরাধী ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য আপনারা আমার নিকট  করুন। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দ্বারা আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করুন। আমরা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি করি আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশে বোমাবাজি-সন্ত্রাস করে, লুটপাট করে দেশকে ধ্বংস করে। বিএনপি-জামায়াত যাতে আবার ক্ষমতায় এসে দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে তার জন্য আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই বলা হয় মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। যারা ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর জন্য গেছেন তাদের কেউ টাকা না নিয়ে ফেরত আসেনি। বিএনপি মিথ্যা ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, ওরা গুজব বলে। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুজবে কান দেবেন না, প্রথমে দেখুন বিষয়টা সত্যি কিনা।

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিশাল এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. হাসান মাহমুদ, আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলার নেতারা কথ্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যাপ্ত বছর পর আপনাদের এইখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ, আক্তারুজজ্জামান বাবু, মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ প্রচুর গুণী মানুষ আমাদের মাঝ হতে হারিয়ে গেছেন। তাদের প্রতি রইল খাঁটি শ্রদ্ধা। ১৯৮৮ সালে এই চট্টগ্রামে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি যখন মিছিল সহকারে লালদীঘি ময়দানে যাচ্ছিলাম তখন আমাকে খুন করার জন্য এরশাদ সরকারের খুনি রকিবুল হুদার নির্দেশে গুলি চালানো হয়। হত্যা করা হয় ৩০ জনকে। তখন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসে অনেক নিরীহ সেনা, বিমানবাহিনীর অফিসারকে  করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে জিয়াউর রহমানের টাইম প্রাণ হারিয়েছে। তাদের হাতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কেউ মুক্তি পায়নি। জামায়াত-শিবির  ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যায় এদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছে, দূর ফেলা হয়েছে বিজয় বাংলা স্লোগানও। আমরা ক্ষমতায় এসে সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে এনেছি। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস এদেশের যুব সমাজ জানতেন না। ৭১ এর ১০ ডিসেম্বর যুদ্ধের সম্পন্ন পর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিনসহ অনেকে। এ ১০ ডিসেম্বর তাদের অনেক পছন্দ। একারণে আগামী ১০ ডিসেম্বরে তারা সভা ডেকেছে ঢাকায়। পাকিস্তানিদের পদলেহন করে বলে দলটি এ তারিখে আবারও কোনো হত্যা, লুটতরাজের পরিকল্পনা করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি দেশে হত্যা, সন্ত্রাসের রাজত্ব শুরু করে। তাদের সময় ৩ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে, ৫০০ মানুষ নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে। বিএনপির দুইটি গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন। ৯৬ সালে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নিয়ে ক্ষমতা নিয়েছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের সব অর্জন বিনাশ করে দেয়। পরে আমরা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছি। করোনাকালে বিশ্বের ভালো না অবস্থার মধ্যে দেশকে ভালো না হতে দেইনি।

জগতের কোনো দেশ বিনা পয়সায় টিকা দেয়নি, আমরা দিয়েছি। কৃষক, ব্যবসায়ীসহ অনেককে প্রণোদনা দিয়েছি। করোনার সময় যেখানে ইউরোপের অবস্থা শোচনীয় অবস্থায় ছিল সে সময় আমাদের দেশের পরিস্থিতি অনেক সুন্দর ছিল। এখনো ইউরোপের পর্যাপ্ত দেশের মানুষ একবেলা অন্ন খেয়ে চলেছে, সেখানে আমরা অনেক ভালো আছি। উনি বলেন, আমাদের অনেক কিছু সাশ্রয় করতে হবে। বিদ্যুতের কষ্ট ছিল সম্মুখে আর থাকবে না। জ্বালানি সাশ্রয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। দেশের মানুষকে খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে যা কিছুই উৎপাদন হোক তা করতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জায়গায়ও খালি রাখা যাবে না।

চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহাজোট সরকার চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন করেছে, সম্মুখে আরো করবে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল হবে, বে টার্মিনাল হবে। ১৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রস্তুত করা হবে। এরই মধ্যে সাবমেরিন কেবলের দ্বারা সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ গেছে। ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন হচ্ছে। মাতারবাড়ী, বাঁশখালীতে পাওয়ার প্ল্যান্ট হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। সমুদ্র সীমানা উদ্ধার করেছি।

চট্টগ্রামবাসী উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যত দূরেই থাকি না কেন, আপনারাই আমার আপনজন। আপনারাই আমার পরিবার। আপনারাই আমার আশ্রয়। নৌকায় ভোট দিয়ে আবার আমাকে জয়যুক্ত করুন। জামায়াত-বিএনপি সরকার যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow