১৪ হাজার কেজি স্বর্ণ আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে

Dec 3, 2022 - 12:38
 0
১৪ হাজার কেজি স্বর্ণ আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে
ছবি: সংগৃহীত

রিজার্ভ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মজুদ রয়েছে ১৪ হাজার ৩৩ কেজি স্বর্ণ। তবে এর মাত্র ১৭ শতাংশ জমা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের ৪২ শতাংশই গচ্ছিত রয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে। বাকি ৪১ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। স্বর্ণ ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ হিসেবে রুপা রয়েছে ৫ হাজার ২৪৮ কেজি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

চলতি বর্ষের ৩০ জুনের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের ভল্টে স্বর্ণ রয়েছে ২ হাজার ৩৬৩ কেজি। আর ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ভল্টে জমা রয়েছে ৫ হাজার ৮৭৬ কেজি স্বর্ণ। বাকি ৫ হাজার ৭৯৪ কেজি স্বর্ণ লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং এইচএসবিসি ব্যাংকে ইনভেস্ট করা হয়েছে।  মিলিয়ে রিজার্ভ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মজুদকৃত স্বর্ণের হিসাব ১৪ হাজার ৩৩ কেজি।

একই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিদেশি কারেন্সির রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ১৮৬ কোটি বা ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। ওই দিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। সে অনুযায়ী টাকার অংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব ছিল ৩ লাখ ৯১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। বিদেশি মুদ্রা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের ১টি ভাগ থাকে স্বর্ণ এবং রুপায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের হিসাব শুধুমাত্র ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মাধ্যমে চালিত হয়। লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও এইচএসবিসির দ্বারা বাংলাদেশ ব্যাংক মজুদকৃত স্বর্ণের একটি ভাগ বিনিয়োগ করে। এ বিনিয়োগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মুনাফা পায়।

চাওয়া মাত্র বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়, এরূপ সম্পদকে রিজার্ভ হিসেবে গণনা করা হয়ে যায় বলা হয়ে থাকে জানালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উত্তম অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ রয়েছে। রিজার্ভ হিসেবে ততটুকুই পরিমাপ করা হয়, যা চাওয়া মাত্র বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়। রিজার্ভের ভিত মজবুত করার জন্য প্রায় সকল দেশই স্বর্ণ মজুদ রাখে। এক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে থাকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের মজুদকৃত স্বর্ণেরও সুবিশাল অংশ ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে গচ্ছিত রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রিজার্ভের ভাগ হিসেবে থাকা স্বর্ণের বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে প্রায় ৩ হাজার কেজি স্বর্ণ রয়েছে। এই স্বর্ণের কোনো অংশই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত নয়। চোরাচালানসহ নানারকম সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কাস্টমসের জব্দ করা স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধুমাত্র কাস্টডিয়ান হিসেবে ভূমিকা রাখে। আইনি নিষ্পত্তি শেষে কোনো স্বর্ণ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হলে সেটা স্থায়ী খাতে স্থানান্তর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খাঁটি স্বর্ণের বার হিসেবে থাকে তাহলে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই কিনে নিয়ে রিজার্ভে অধিভুক্ত করে। আর অলংকার হিসেবে থাকে তাহলে নিলামের দ্বারা মার্কেটে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্থায়ী খাতে ২ হাজার ৮৫০ কেজি স্বর্ণ রয়েছে। আর স্থায়ী খাতে স্বর্ণ রয়েছে প্রায় ১৫০ কেজি।

গত এক বছরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দর কয়েক দফায় বেড়েছে। এ কারণে রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের মূল্যমানও বাড়িয়ে দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১ বছরের ৩০ জুন রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের মূল্য ছিল ৬ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। চলমান বছরের ৩০ জুন রিজার্ভের স্বর্ণের দর ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের স্বর্ণের দাম ৯৪৪ কোটি টাকা বেড়েছে।

প্রায় দেড় বছর ধরে রিজার্ভ হতে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) দায় পরিশোধের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিকট রিজার্ভ বিক্রি করা হচ্ছে। শুধুমাত্র চলমান অর্থবছরের ১ম পাঁচ মাসের মধ্যেই (জুলাই-নভেম্বর) রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়ে গিয়েছে ৬০৫ কোটি ডলার। বিগত অর্থবছরেও রিজার্ভ হতে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। বিগত বছরের আগস্টে রাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ হিসাবে এক বছরেরও কম সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে। পর্যায়ক্রমে রিজার্ভ হতে বিদেশি কারেন্সি বিক্রি করা হলেও এই টাইমে মজুদ থাকা কোনো স্বর্ণ বিক্রি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, একসময় স্থানীয় মুদ্রা ছাপাতেও স্বর্ণের মজুদ থাকতে হতো। কিন্তু বেশ আগেই পৃথিবী অর্থনীতিতে স্বর্ণের গুরুত্ব কমে এসেছে। এখন টাকার মতো স্থানীয় মুদ্রা ছাপাতে স্বর্ণের মজুদ থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণের গুরুত্ব এখনো একেবারে হারিয়ে যায়নি। জগতের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো স্বর্ণের মজুদ বাড়াচ্ছে। যদিও আইএমএফ নিজেই অনেক স্বর্ণ মার্কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।

রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে বলা হয়ে থাকে মনে করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিনিময় হার নিয়ে চাপাচাপির কারণে রেমিট্যান্স হুন্ডিতে চলে যাচ্ছে। এ কারণে দেশে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে পতন হয়েছে। আবার রফতানি আয়ও কমে যাচ্ছে। বিদেশি মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুই মাধ্যমই এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতির ক্ষত আরো গভীর হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow