ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে পদ-পদবি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে

Dec 1, 2022 - 19:47
Dec 13, 2022 - 16:53
 0
ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে পদ-পদবি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে
৬ ডিসেম্বর সম্মেলন

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন ৬ ডিসেম্বর। ৩০তম এই সম্মেলন ঘিরে পদ-পদবি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। আওয়ামী লীগের শিক্ষার্থী সংগঠন ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে যেতে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পায় পক্ষান্তরে কোন যোগ্যতা আমলে নেওয়া হয়ে যায় তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে এলে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে এসব বিষয়। ‘আঞ্চলিকতা’ এবং ‘সিন্ডিকেট’-এ নেতৃত্ব নির্বাচন ঘুরপাক খাচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র নেতারা বলছেন, সংগঠনকে কে ধরে রাখতে পারবে পক্ষান্তরে তার নেতৃত্বগুণ কতটা তা প্রাধান্য দিয়েই নেতা নির্বাচন করা হয়। আঞ্চলিকতার সুযোগ নেই।

ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সাম্প্রতিক সহ-সভাপতি সোহান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্মেলন এলেই কারা ছাত্রলীগের নব দায়িত্বে আসবে তার আলোচনা চালু হয়। যোগ্য ও স্কিলফুল নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য কোনো অঞ্চল দেখা উচিত নয়। এতে পর্যাপ্ত উপযুক্ত ও স্কিলফুল নেতৃত্ব বাতিল পড়ে। এছাড়া বয়স  হবে তা নিয়ে যে আলোচনা হয়ে যায় সেটাও আসতো না যদি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রেগুলার সম্মেলন হতো।’

তবে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জড়িত না থাকা অথবা সম্মেলনের প্রথমে তেমন আলোচনায় না থেকেও মেহেদী হাসান মোল্লা, ওমর শরীফ, এস এম জাকির হোসেন, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনসহ পর্যাপ্ত নেতাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সমিতি এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটির  আগা পদের দায়িত্ব পেয়েছেন।

 চার দশকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শীর্ষ দুই পদে দায়িত্ব পালনকারীদের বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে লক্ষ্য যায়, ১৯৮১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত  ৪১ সালের গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন্দ্রীয়  দুই বছর এবং ইউনিট মন্ত্রণাসভা এক বছর মেয়াদি হওয়ায় যেখানে ১২০ মানব দায়িত্ব পালন করার কথা। অথচ শীর্ষ দুই পদসহ আহ্বায়ক হিসেবে ৫১ জন দায়িত্ব পালন করেছেন এই সময়ে। এর মধ্যে বরিশাল আর ফরিদপুর এলাকা থেকেই শীর্ষ দুই পদে ছিলেন ২৪ জন। অবশিষ্ট ২৭ মানব অন্য এলাকা থেকে দায়িত্ব পান। কোনো কোনো এলাকা হতে শীর্ষপদে আসীন হতে পারেননি কেউ। ফলে নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রাধান্য এবং যোগ্যতা আসলে কী সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি

১৯৮১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত  ৪১ বর্ষের ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন-খ ম জাহাঙ্গীর (১৯৮১-১৯৮৩), আব্দুল মান্নান-জাহাঙ্গীর কবির নানক (১৯৮৩-১৯৮৫), সুলতান মুহাম্মদ মনসুর-আব্দুর রহমান (১৯৮৬-১৯৮৮), হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার  (১৯৮৮-১৯৯২), মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী-ইকবালুর রহিম (১৯৯২-১৯৯৪), এ কে এম এনামুল হক শামীম-ইসহাক আলী খান পান্না (১৯৯৪-১৯৯৮), বাহাদুর বেপারি-অজয় কর খোকন (১৯৯৮-২০০২), লিয়াকত শিকদার-নজরুল ইসলাম বাবু (২০০২-২০০৬), মাহমুদ হাসান রিপন-মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (২০০৬-২০১১), এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ-সিদ্দিকী নাজমুল আলম (২০১১-২০১৫), সাইফুর রহমান সোহাগ-এস এম জাকির হোসেন (২০১৫-২০১৮), রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন-গোলাম রাব্বানী (২০১৮-২০১৯), আল-নাহিয়ান খান জয়-লেখক ভট্টাচার্য (২০১৯- ২০২২)। এই সময়ে যে ২৭ মানুষ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তার ভিতরে সবচেয়ে অধিক ছয়জন ফরিদপুর অঞ্চলের। এরপরই রয়েছে বরিশাল অঞ্চলের চারজন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের তিনজন, রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের দুই বিভাগের পাঁচজন। আর চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এবং ঢাকা অঞ্চলের মাত্র দুজন করে আটজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি

ছাত্র রাজনীতির আঁতুড়ঘর খ্যাত ঢাকা ভার্সিটি ছাত্রলীগের কমিটিতেও একই চিত্র।  ৪১ সালের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিটগুলোতে এক বছর পরপর কমিটি হলে ৪১টি পরিচালক সমাবেশ হওয়ার কথা, সেখানে হয়ে গিয়েছে মাত্র ১২টি। ১৯৮১ বর্ষের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন খলিলুর রহমান মোহন-আতাউর রহমান ডিউক (১৯৮১-১৯৮৩), আহ্বায়ক মকবুল হোসেন খান (১৯৮৩-১৯৮৫), মনিরুজ্জামান বাদল-মমতাজ উদ্দিন মেহেদী (১৯৮৬-১৯৮৮), গোলাম মোস্তফা সুজন-কামরুজ্জামান আনসারী (১৯৮৮-১৯৯২), খিজির হায়াত লিজু-পংকজ দেবনাথ (১৯৯২-১৯৯৪), বাহাদুর বেপারি-আবদুল ওয়াদুদ খোকন (১৯৯৪-১৯৯৮), সাজ্জাদ হোসেন/বেগ শাহীন জাহান (ভারপ্রাপ্ত) এই কে এম আজিম (১৯৯৮-২০০২), দেলোয়ার হোসেন-হেমায়েত উদ্দিন খান হিমু (২০০২-২০০৬), শেখ সোহেল রানা টিপু-সাজ্জাদ সাকিব বাদশা (২০০৬-২০১১), মেহেদী হাসান মোল্লা-ওমর শরীফ (২০১১-২০১৫), আবিদ আল হাসান-মোতাহার হোসেন প্রিন্স (২০১৫-২০১৮), সনজিত চন্দ্র দাস-সাদ্দাম হোসেন (২০১৮-২০২২)।

শিক্ষার্থী রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন মাত্র ২৪ জন। এ ২৪ জনের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি বরিশাল অঞ্চলের আটজন। এরপরই ফরিদপুর অঞ্চলের ছয়জন, আবরণ অঞ্চলের চারজন, খুলনা অঞ্চলের তিনজন, রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের দুই বিভাগের একজন, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন করে। কিন্তু এখানে সিলেট অঞ্চলের একজনও দায়িত্ব পায়নি।

আলোচনায় থাকেন যারা

ছাত্রলীগের সম্মেলনের ঘোষণা এলেই বরিশাল, ফরিদপুর উদাহরণসরূপ সর্বাপেক্ষা অধিক আলোচনায় থাকে তেমনি একেবারে কম আলোচনায় থাকে বৃহত্তর ঢাকা ও সিলেট। বিভিন্ন সময়ে যেসব এলাকা থেকে অধিক শীর্ষ পদ পেয়েছে সম্মেলন এলে সেসব অঞ্চলের নেতারাই আলোচনায় থাকেন। এবারের সম্মেলনেও আলোচনায় রয়েছেন ফরিদপুর-বরিশাল অঞ্চলের এক ডজন পদপ্রত্যাশী নেতা। অঞ্চলভিত্তিক আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেই তদবির করেন পদপ্রত্যাশীরা। ফলে আদর্শের চর্চা, যোগ্যতা এবং নেতৃত্বের দক্ষতায় আলোচনায় থাকলেও অন্য অঞ্চলের পদপ্রত্যাশীরা শেষ দৌড়ে টিকে থাকেন না।

ছাত্রলীগের ডিজিটাল কমিটির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে অঞ্চল কোনো গঠনতান্ত্রিক বিষয় নয়। তারপরও জাতীয় রাজনীতিতে ফরিদপুর কিংবা বরিশাল অঞ্চলের নেতাদের অবদান বহু হওয়ায় সেসব অঞ্চলের ছাত্রনেতারাও সম্মেলন এলে আলোচনায় থাকেন। এটা হওয়া কর্তব্য নয়। নেতৃত্ব নির্বাচনে আদর্শিক চিন্তা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা দেখা উচিত। যেসব এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংকট বিদ্যমান সেসব এলাকা হতে নেতা হওয়া দরকার।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow