কমেছে সুদহার, আমানত হারাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ব্যাংকবহির্ভূত অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে সময়মতো ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহক। ব্যাংক বা নানারকম করপোরেট প্রতিষ্ঠানও সেখানে টাকা রেখে যথাসময়ে তুলতে পারছে না

Dec 20, 2022 - 11:30
 0
কমেছে সুদহার, আমানত হারাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান
জুন শেষে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বমোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা: সংগ্রহীত ছবি

ব্যাংকবহির্ভূত অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে সময়মতো ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহক। ব্যাংক বা নানারকম করপোরেট প্রতিষ্ঠানও সেখানে টাকা রেখে যথাসময়ে তুলতে পারছে না। এ জাতীয় অবস্থায় উচ্চ সুদ কিংবা নানা অফারের পরও আমানত কমছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে।  জুন শেষে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বমোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। তিন মাস আগের তুলনায় যা ২৮২ কোটি টাকা কম। গত ডিসেম্বরের তুলনায় কমেছে ৭৮৭ কোটি টাকা। গত সালের একই সময়ে অর্থাৎ জুন শেষে আমানতের হিসাব ছিল ৪২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা।হসংশ্নিষ্টরা জানান, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঋণের নামে প্রচুর অর্থ বের করার ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে এই খাতের আর্থিক ভিত অনেকটা অদক্ষ হয়ে পড়েছে। বেশ আগ হতে অসার অবস্থা থাকলেও বেশি খারাপ হয়েছে ২০১৯ সালে পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগের পর।

আরও পড়ুনঃ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি বিশিষ্টজনদের 

এর কিছুদিনের মধ্যে আবার এনআরবি গ্লোবাল ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আধিপত্য করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সম্মুখে আসে। সকল মিলিয়ে বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন টাকার সংকটে পড়েছে। ক্রমেই এ খাতের প্রতি আশ্বাস কমায় আমানত কমছে।হবাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ৬ মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদি আমানত ৮০৬ কোটি টাকা কমে যায় ৪২ হাজার ৯৯ কোটি টাকায় নেমেছে। আদার্স আমানত ১১ কোটি টাকা কমে ২৮২ কোটি টাকায় নেমেছে। কেবল পুনর্বিনিয়োগের হিসাব গত ডিসেম্বরের তুলনায় ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৭২ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখার বেশিরভাগই ঢাকায়। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের ৩৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৫২ শতাংশ আগত ঢাকা বিভাগ থেকে। ২য় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগের আমানত রয়েছে এক হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। রাজশাহী বিভাগ ৪৮৭ কোটি, খুলনা ৩২৪ কোটি, সিলেট ২৩৯ কোটি, ময়মনসিংহ ৮০ কোটি এবং বরিশাল এবং রংপুর বিভাগ হতে এসেছে ৫৬ কোটি টাকা করে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কমার পাশাপাশি ঋণ স্থিতি বেড়েই চলেছে অতি ধীরগতিতে। গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বমোট ঋণ স্থিতির হিসাব দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। ৬ মাস প্রথমে অর্থাৎ  ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৬৬ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। এর মানে ডিসেম্বরের তুলনায় ঋণ স্থিতি বেড়েছে মাত্র ৪৬৩ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ঋণের ৫৬ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বা ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে আবরণ বিভাগে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সুদ যোগ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও আমানত স্থিতি হিসাব প্রকাশ করা হয়। গত জুনে যে পরিমাণ দেনা স্থিতি বিদ্যমান তাতে গড়ে ১১ শতাংশ সুদ হিসাব করলেও প্রতি মাসে এ্যাভারেজে ৬১৪ কোটি অর্থের মতো সুদ আসে। এর মানে ৬ মাসে সুদ বাবদই সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বহু যোগ হয়েছে। অর্থাৎ আমানতের মতো প্রকৃতপক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণও কমছে।

জানা গেছে, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত ফেরত না দেওয়ার অনেক অভিযোগ যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত না দেওয়ার প্রভাবে পুরো খাত চাপে পড়েছে। সাধারণ আমানতকারীদের একসাথে নানারকম করপোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক অথবা ভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এসব প্রতিষ্ঠানে পূর্বের মতো আর টাকা রাখছে না। আবার নানা অনিয়মের দ্বারা বিতরণ করা ঋণও সময় মতো ফেরত আসছে না। যে কারণে উচ্চ সুদের কম করেও আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রচুর আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিন মাস মেয়াদি আমানতে ৯ হতে ১২ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow