ChatGPT কী আসলেই সবার চাকরি খাবে?

চ্যাটজিপিটির আবির্ভাবের পর থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে মানুষের চাকরির বাজার নিয়ে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, অনেক মানুষের চাকরি খেয়ে ফেলতে পারে চ্যাটজিপিটি। তবে এর বিপরীত স্রোতের মতও আছে এবং তার প্রাবল্যও কম নয়।

Feb 21, 2023 - 17:25
Feb 21, 2023 - 17:57
 0
ChatGPT কী আসলেই সবার চাকরি খাবে?
সংগ্রহীত ছবি

চ্যাটজিপিটির আবির্ভাবের পর থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে মানুষের চাকরির বাজার নিয়ে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, অনেক মানুষের চাকরি খেয়ে ফেলতে পারে চ্যাটজিপিটি। তবে এর বিপরীত স্রোতের মতও আছে এবং তার প্রাবল্যও কম নয়।

 বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যাটজিপিটির কাজ হলো এতে ইনপুট দেওয়া তথ্য থেকে গ্রাহকের চাওয়া তথ্য খুঁজে বের করে সাজিয়ে দেওয়া মাত্র। এর বাইরে তেমন কিছু করার ক্ষমতা চ্যাটজিপিটির নেই। ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক জোনাথন মে সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন যে, মানুষ চ্যাটজিপিটির ভুল ব্যবহার করছে। অ্যালগরিদম অনুযায়ী চ্যাটজিপিটির যথার্থ ব্যবহার এখনও হচ্ছে। তথ্য সন্নিবেশ করাই এর মূল কাজ, সঠিকতা নির্ধারণ নয়। সে কারণে চ্যাটজিপিটির দেওয়া তথ্যে ভুল থাকাটাও স্বাভাবিক।

chatGPT

  • অন্য ফিল্ডের কথা বাদ দিয়ে শুধু প্রোগ্রামিংয়ের কথা যদি বলি। সেক্ষেত্রে কেউ কেউ মনে করতে পারে এখন chatGPT শুধু ছোট ছোট কোড ব্লক করে দিতে পারে। বা ছোট ছোট কোড ব্লকের মধ্যে কিছু ভুল থাকলে সেটা ধরিয়ে দিতে পারে। সে বড় কোড করে দিতে পারে না। বা ভেজাইল্লা কোড করে দিতে পারতেছে না। কিংবা দুই তিন ফাইলের মেশানো কোডে ডিবাগ করতে পারেননা। বা দুই-চারটা জিনিসে ভুল উত্তর দিতেছে। সেটা নিয়ে হাসাহাসি করতেছে। আমার কাছে এইগুলা প্রাথমিক লেভেল হিসেবে ঠিক আছে। কারণ chatGPT এখন শিশু।
    এদিকে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানুষ কীভাবে গ্রহণ করছে, সেটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ দিনশেষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভোক্তাও আসলে মানুষই। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের একদল গবেষকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অ্যালগরিদমভিত্তিক সিদ্ধান্ত মানুষ সহজে মেনে নিতে পারে না। যেমন ধরুন আপনি কোনো ব্যাংকে গাড়ি কেনার জন্য ঋণের আবেদন করেছেন। এটি গৃহীত হতে পারে, আবার প্রত্যাখানও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এমন ক্ষেত্রে মানুষ যন্ত্রের কাছ থেকে পাওয়া সিদ্ধান্ত সহজভাবে নিতে পারে না। বরং অন্য মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হলেও তা মেনে নেয়।

একই ধরনের ফলাফল দেখা গেছে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন ও স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসের এক যৌথ গবেষণাতেও। তাতে দেখা গেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা হিউম্যান অ্যাসিস্ট্যান্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিয়ে বানানো কোনো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বা শিল্পকর্মের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন না। তারা এ ধরনের কাজের কৃতিত্ব স্বীকার করে নিতেও অনিচ্ছুক থাকেন। অর্থাৎ, মানুষ আসলে শুধু মানুষের কাজের কৃতিত্বই স্বীকার করতে চায়, যন্ত্রের নয়।


তবে ভয় পাওয়ার তেমন কারণ নাই। কারণ নেয়ার ফিউচারে AI টুলসগুলা দুনিয়ার ১০০% সব প্রোগ্রামারদেরকে রিপ্লেস করতে পারবে না।

১) AI বেইজড টুলস কে কমান্ড দেয়ার জন্য হলেও প্রোগ্রামিং জানে বুঝে। এবং chatgpt যে উত্তর দিচ্ছে সেটা বুঝে নিবে। সেই লেভেলের প্রোগ্রামিং জানা লোক লাগবে।

২) কাস্টমার নিড বুঝে সেই অনুসারে সফটওয়্যার এর ফিচার, ইনোভেটিভ এঙ্গেল বের করার জন্য হলেও প্রোগ্রামারদের লাগবে। অর্থাৎ কি রিকোয়ার্মেন্টস, কি স্পেসিফিকেশন সেটার ডিসিশন নিতে হলেও প্রোগ্রামিং জানা কিছু হিউম্যানকে ডিসিশন মেইক করতে হবে।

.

৩) আজ থেকে ৫-১০ বছর পরে সফটওয়্যার এর ডিমান্ড, কমপ্লেক্সিটি, সফটওয়্যার এর সংখ্যা এবং কাজের ভলিউমও বাড়বে। অর্থাৎ chatgpt বা এই টাইপের টুলস না আসলেও আরো বেশি প্রোগ্রামার এমনিতেই লাগতো। অর্থাৎ কাজের পরিমাণ, এবং প্রোগ্রামারের দরকার এমনিতেই বাড়বে।

.

৪) তবে সেই ডিমান্ড আবার একটু কমে আসবে। কারণ কিছু স্মার্ট প্রোগ্রামাররা (হিউম্যান প্রোগ্রামাররা) এইসব AI বেইজড টুল ইউজ করে তাদের প্রোডাক্টিভিটি দুই, তিনগুণ বাড়িয়ে নিবে। তাদের লাইন বাই লাইন কোড লেখা লাগবে না। গুগলে সার্চ দিয়ে উত্তর বের করার দরকার কম হবে। ডিবাগ অনেক ইফিসিয়েন্ট হবে। ততদিনে chatGPT আরো বড় বড় কোড ব্লক এর কোড করে দিতে পারবে। প্রোগ্রামার কোড রিভিউ বা ওভারভিউ দিয়ে চেক করে নিবে। ইন্টিগ্রেট করবে। ঠিক মতো না হলে ডিফারেন্ট কোডব্লক দিতে বলবে। আউটপুট এক্সপেক্টশন এর সাথে ঠিক আছে কিনা সেটা চেক করবে। অর্থাৎ যারা ভালো প্রোগ্রামিং জানে এবং AI বেইজড টুলস ইউজ করতে পারে তাদের কোন সমস্যা হবে না। বরং তাদের ডিমান্ড এবং স্যালারি অনেক বেড়ে যাবে।

৫) যারা ইনোভেটিভ চিন্তা করতে পারে। ক্রিয়েটিভ মানুষ। নিত্য নতুন জিনিস নিয়ে আসতে পারে। তাদের ডিমান্ড থাকবে।

------

চার ধরণের প্রোগ্রামার ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বা তাদের ডিমান্ড কমে যাবে বা তারা চাকরি হারাবে।

১. যারা প্রোগ্রামিং জানে কিন্তু AI বেইজড টুলস ইউজ করবে না। কিংবা ট্রাই করে দেখবে না। তাদের প্রোডাক্টিভিটি; যারা AI বেইজড টুলস ইউজ করবে তাদের চাইতে কম হবে। এবং তারা ধরা খাবে।

২. যেসব প্রোগ্রামার প্রোগ্রামিং ভালোভাবে না শিখেই AI বেইজড টুলস ইউজ করতে যাবে। এবং AI ডিফারেন্ট কোন উত্তর দিলে ধরতে পারবে না। বা ইন্টিগ্রেট করতে পারবে না। তাদের প্রোডাক্টিভিটি স্বাভাবিকভাবেই কমবে। এবং তাদের একটা বড় অংশ ধীরে ধীরে চাকরি হারাবে।

.

৩. AI আমাদের চাকরি খেয়ে দিবে বলে যারা বসে থাকবে। শিখবে না। চেষ্টা করবে না।

৪. যাদের লার্নিং গ্রোথ নাই। সেইম রিপিটিটিভ কাজ করবে। তাদের কাজ ইজিলি AI বা AI এর সুপার পাওয়ার ওয়ালা আরেকজন করে ফেলবে।

সো, এইভাবে চিন্তা করলে মিনিমাম ১০-২০% মানুষ যারা লেটেস্ট টেকনোলজি এডাপ্ট করবে না। তারা জব হারাবে।

.

মেইন কথা হচ্ছে-- তুমি মানো আর না মানো। টেকনোলজিক্যাল রিভোলিউশন আসলে সে কারেন্ট সিস্টেমে ইমপ্যাক্ট ফেলবেই। সেটা এভোয়েড করার একমাত্র উপায়-- সেই টেকনোলজি, সেই টেকনোলজি এর সুপার পাওয়ার নিজে আয়ত্ত করা। সেটা ইউজ করে তোমার নিজের এবিলিটি, তোমার প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে নিতে পারলে তুমি টিকবে। না হয়, তুমি মারা খাবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow