রক্তস্বল্পতা কী ও কেন ?

চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় রক্তস্বল্পতাকে অ্যানিমিয়া বলে। রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে লাল রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকে। রক্তের কোষগুলোতে অক্সিজেন পৌঁছানোর জন্য হিমোগ্লোবিনের দরকার।

Mar 2, 2023 - 19:22
 0
রক্তস্বল্পতা কী ও কেন ?
সংগ্রহীত ছবি

কোষগুলোতে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিনের অভাব থাকলে শরীর সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। এতে ঠান্ডা অনুভূত হয়, ক্লান্তি বা দুর্বলতার লক্ষণগুলোও প্রকাশ পায়। অ্যানিমিয়া বিভিন্ন ধরনের আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা।

প্রশ্ন : একজন মানুষ রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হন কেন?

উত্তর : খুব ছোট প্রশ্ন। তবে এর উত্তর জটিল। এটি অনেকগুলো কারণে হতে পারে। আমাদের দেশের ৪৩ ভাগ নারীই রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত। এটি ডাব্লিউএইচওর গণনা। এটি খুব বড় ধরনের সমস্যা। এটা কেন হয়? সাধারণত আমাদের দেশের মেয়েদের খাওয়াদাওয়ার ভুল অভ্যাস, আগেভাগে বিয়ে হওয়া, ঘন ঘন বাচ্চা হওয়া, সাপ্লিমেন্টটা ঠিকমতো না দেওয়া, পোস্ট নেটাল চেকআপটি ঠিকমতো না হওয়া, ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া বা এর চিকিৎসা সঠিকভাবে না হওয়া ইত্যাদি কারণে রক্তস্বল্পতার সমস্যা হয়। এর জন্য প্রায় ৪৩ ভাগ মেয়ে আমাদের দেশে রক্তস্বল্পতায় ভোগে।

এ ছাড়া ছেলেদের ক্ষেত্রে যদি আসি, তাহলে দেখব, কৃমি একটি বিষয়। বিশেষ করে শিশুদের। এরপর বিভিন্ন ধরনের টিউমার থেকে শুরু করে, ক্যানসার থেকে শুরু করে, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে, বিভিন্ন ধরনের রোগ, সেটা কিডনি রোগ হোক- এসব কারণে রক্তস্বল্পতা হয়। আমরা জানি রক্ত তৈরি হওয়ার জন্য যে হরমোন লাগে ইরেথ্রোপয়েটিন এটি কিডনি থেকে আসে। যাদের কিডনিতে সমস্যা থাকে, ওই হরমোন যদি কোনো কারণে ডিসটার্ব হয়, তাহলে সে রক্তস্বল্পতায় ভুগবে। ডায়াবেটিস যদি কারো থাকে, তাহলে লোহিত কণিকা তৈরি হওয়ার যে প্রক্রিয়াটা, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন রক্তশূন্যতায় ভোগে। আমাদের ভিটামিন বি১২-এর যদি অভাব হয়, ফলিক এসিডের যদি অভাব হয়, বোন মেরু কার্যক্রম যদি ঠিক না থাকে, তাহলে রক্তশূন্যতা হবে। আবার যারা জন্মগতভাবে বিভিন্ন হিমোগ্লোবিন ডিজঅর্ডারে ভুগছে, থেলাসেমিয়া বা হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিস, এতেও রক্তশূন্যতা হয়। আবার খাদ্যনালি থেকে রক্ত বের হয়ে যেতে পারে বিভিন্ন কারণে। অনেকের গ্যাসট্রিক আলসার থাকে, অনেকের গ্যাসট্রিক ক্যানসার থাকে, কোলনে অনেকের ক্যানসার থাকে- এসব কারণে সমস্যা হয়। আবার বিভিন্ন পলিপ থাকে। এই পলিপগুলো খুব প্রচলিত। সবগুলো পলিপের কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা জানি না। অনেকগুলো পলিপ আছে যেগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয়। আবার দীর্ঘমেয়াদে যাদের পাইলস বা এ রকম রোগ আছে তাদেরও রক্তস্বল্পতা হতে পারে।
রক্তস্বল্পতার কারণ


অনেক কারণে অ্যানিমিয়া হতে পারে, এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো—

  • পেটের আলসার থেকে রক্তক্ষরণ হলে।
  • হেমোরয়েডস/পাইলস রোগের কারণে রক্তক্ষরণ হলে।
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।
  • শরীরে ভিটামিন ও আয়রনের ঘাটতির কারণে।
  • পর্যাপ্ত আয়রন ছাড়া খাদ্য গ্রহণ—বিশেষ করে শিশু, কিশোর এবং নিরামিষাশীদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা হয়।
  • কিছু ওষুধ, খাবার এবং ঘনঘন ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান।
  • হজমের অবস্থা যেমন ক্রোহন ডিজিজ, অথবা যদি পেট বা ছোট অন্ত্রের অংশ অপসারণ হয়ে থাকে।
  • দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন: ক্যান্সার, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, লুপাস রোগের কারণেও হিমোগ্লোবিন কমতে পারে।
  • অস্থিমজ্জার সঙ্গেও অ্যানিমিয়ার সম্পর্ক আছে।
  • বার্ধক্যজনিত কারণেও অনেক সময় শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

রক্তস্বল্পতার লক্ষণ


রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে ক্লান্ত লাগবে, ত্বক ফ্যাকাসে হবে, হাত-পা ঘনঘন ঠান্ডা হয়ে যাবে। এছাড়া, বুক ব্যথা, শ্বাস নিতে সমস্যা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়াও এর লক্ষণ।

চিকিৎসা


  • অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা হয় মূলত কারণ বিবেচনা করে। যদি ভিটামিনের অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয় তবে চিকিৎসকরা ভিটামিন সমৃদ্ধ ডায়েট গ্রহণের পরামর্শ দেন।
  • কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি কাটাতে রোগীদের ইনজেকশন নেওয়ারও পরামর্শ দেন। যদি আয়রনের ঘাটতিজনিত কারণে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় তবে রোগীর ডায়েটে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • মাসিকের সময় বেশি রক্ত যাওয়ার অন্যতম কারণ জরায়ুতে থাকা ফাইব্রয়েড, যা অনেক সময় অপারেশন করার প্রয়োজন হয়। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক রোগীদের রক্ত সঞ্চালনের পরামর্শ দেন। অস্থিমজ্জার সঙ্গে সম্পর্কিত অ্যানিমিয়া কেমোথেরাপি, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
  • গুরুতর রক্তস্বল্পতা প্লীহা অপসারণের কারণেও হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, রক্তের বিনিময় বা কৃত্রিম ইরাইথ্রোপয়েটিন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এটি এক ধরনের হরমোন যা লাল রক্তকনিকা উৎপাদনে সাহায্য করে।

রক্তস্বল্পতা কাটাতে কী খাওয়া উচিত


অ্যানিমিয়া দেখা দিলে বেশি করে পালং শাক, সয়াবিন, বিট, লাল মাংস, চিনাবাদাম, মাখন, টমেটো, ডিম, বেদানা, সিরিয়াল, বীজ জাতীয় খাবার, শুকনো ফল, সামুদ্রিক খাবার, আপেল, খেজুর ইত্যাদি খেলে আয়রনের ঘাটতি দ্রুত পূরণ হবে।

অ্যানিমিয়া রোগীদের ট্যানিন জাতীয় খাবার যেমন কফি, গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি, আঙুর, দই, দুধ, পনির এড়িয়ে চলা উচিত।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow