বিএনপির নেতারা ক্রমাগতভাবে বলে যাচ্ছে আমরা নাকি দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নেতারা ক্রমাগতভাবে বলে যাচ্ছে আমরা নাকি দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছি। আপনারাই বলেন, আজকেও শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করলাম। এগুলো কি ধ্বংসের নমুনা? তাহলে তারা এতো মিথ্য কথা বলে কেন? কারণ মিথ্যা বলাটা তাদের বেসাতি।

Mar 11, 2023 - 19:40
 0
বিএনপির নেতারা ক্রমাগতভাবে বলে যাচ্ছে আমরা নাকি দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছি : প্রধানমন্ত্রী
সংগ্রহীত ছবি

শনিবার ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ময়মনসিংহ জেলা সার্কিট হাউজ মাঠে এ জনসভার আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার মাসে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। এরপর তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো কাছে যেন আমাদের হাত পাততে না হয়। চাষাবাদ, ফসল উৎপাদন পশুপালনসহ যে যেটা পারেন সেই কাজ করতে হবে। যেভাবেই হোক উৎপাদন বাড়াতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন: আমরা কথা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, সেটা আমরা করেছি। প্রতিটা ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। এদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এসে খাদ্য ঘাটতি দূর করেছি। ২০০১ সালে আমরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখনও ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রেখে গেছি। ২০০১ সালে আসলো লুটেরা একদল, সন্ত্রাসীর দল বিএনপি। তারা আবার বাংলাদেশকে খাদ্যে ঘাটতির দেশে পরিণত করে। ২০০৯ সালে আবার যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখি আবার সেই ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি। আল্লাহর রহমতে দেশে এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই। ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য এখন মজুত আছে।

তিনি আরও বলেন, “‘আমরা লক্ষ্য স্থির করেছিলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আর সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশে আমাদের জনগোষ্ঠী ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণ করবে, স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট, কৃষি হবে স্মার্ট, স্বাস্থ্য হবে স্মার্ট। বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের জীবন উন্নত হবে। গ্রামের মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা পাবে। সেভাবেই আমরা ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”

সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের মানুষের উন্নতিই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি এইটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। আমি ফের যুব সমাজকে বলব, একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। আপনারা সেখানে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করবেন। নিজেরা কাজ করবেন, নিজেরা উদ্যোক্তা হবেন। মা-বোনদেরও বলব, আপনারাও নিজেরা উদ্যোক্তা হবেন।’ প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান উন্নতের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

করোনা অতিমারি না হলে ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়ন কর্মসূচি আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের শক্তিতে নিজেদের চলতে হবে। বিভাগ হিসেবে ময়মনসিংহ চমৎকার একটা বিভাগ। শিক্ষার ক্ষেত্রে, ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে- এই বিভাগ হবে সব থেকে উন্নত।’কষ্ট করে জনসভাকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমার তো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি। যেদিন ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে। আমি জানতাম না কোথায় থাকব, কীভাবে চলব। শুধু একটা চিন্তাই করেছি, এই দেশে আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে। এদেশের মানুষকে দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি দিতে হবে। গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের উন্নত জীবন দিতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এই স্বাধীনতা লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি। এই স্বাধীনতা কোন মতে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না।’

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি শুধু বিদায়ের আগে এইটুকু বলে যেতে চাই, রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নেই। আছে শুধু ভালবাসা। দিয়ে গেলাম ময়মনসিংহ বিভাগের জনগণের জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে মিছিল আর স্লোগানে উৎসবমুখর নগরীতে পরিণত হয় ময়মনসিংহ। বিশেষ ট্রেন, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে লাখ লাখ নেতাকর্মী জনসভায় যোগ দেয়।

সার্কিট হাউজ মাঠে বিকেল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চে আসেন। তার আগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

মঞ্চে আসন গ্রহণের পর প্রধান অতিথিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর পর সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার পর ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সার্কিট হাউজের জনসভায় ১০৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৯৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এছাড়াও স্থানীয় নেতারা জনসভায় বক্তৃতা করেন। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এবং মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow