প্রবাসীর মরদেহের কবর খুঁড়েও হলো না দাফন

কফিনে আসছে আফছর মিয়ার (৪১) মরদেহ। শেষবারের মতো প্রিয়জনের লাশ দেখার জন্য বাড়ি ভর্তি শোকাহত স্বজনরা। মসজিদে ঘোষণা করা হয় জানাজার সময়সূচি। দাফনের জন্য গোরস্তানে কবর খোঁড়াও হয় আর লাশ কবরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত খাটিয়া। কিন্তু যার জন্য এমন শোকাবহ আয়োজন- পরিবার ও স্বজনদের কাছে কফিনে আসেনি সেই আফছর মিয়ার মরদেহ। লাশ ফ্রিজিংভ্যান থেকে নামানোর পর বাধে বিপত্তি, কফিনে এসেছে অপরিচিত মানুষের লাশ। ফলে হলো না জানাজা ও দাফন।

Mar 12, 2023 - 11:52
 0
প্রবাসীর মরদেহের কবর খুঁড়েও হলো না দাফন
ছবি: সংগৃহীত

এমন ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের দামোধরতপী গ্রামে। আফছর মিয়া ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে লিভার ক্যান্সারে গ্রিসের এথেন্সের সুতরি হাসপাতালে মারা যান। তিনি এই গ্রামের মরহুম জমসিদ আলীর বড় ছেলে।

আফছর মিয়া গ্রিসের এথেন্সের সুতরি হাসপাতালে মৃত্যুর সময় তার ভাই মোহাম্মদ এমরান মিয়াও সেখানে ছিলেন। মৃত্যুর চারদিন পর লাশ দেশে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনিও দেশে চলে আসেন।

আফছর মিয়ার লাশের সঙ্গে যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল, সে ঠিকানায় শুক্রবার (১০ মার্চ) রাত সাড়ে তিনটায় মরদেহ নিয়ে লাশবাহী গাড়িও এসেছে। লাশ পেয়ে আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু লাশ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে নামানোর পর বাঁধে বিপত্তি। 

এ লাশ যে আফছর মিয়ার নয়। পৌঁছেছে জালাল মিয়া (৫২) নামে অন্যজনের লাশ। যার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শিলনপুর গ্রামে। তিনি বাবা শফিক উদ্দিনের ছেলে। তিনিও গ্রিসপ্রবাসী ছিলেন। ১৩ মার্চ তার লাশ দেশে আসার কথা ছিল,।

কিন্তু ভুলবশত আফছর মিয়ার নাম লেখা স্টিকারটি জালাল মিয়ার কফিনে লাগিয়ে দেয়ার কারণে ঠিকানায় তারিখ পরিবর্তিত হয়ে চলে আসে। আফছর মিয়ার লাশ এখনো গ্রিসের এথেন্সেই আছে। ১৩ মার্চ জালাল মিয়ার লাশ দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

আফছর মিয়ার ভাগ্নে তোফায়েল আহমদ জানান, আমি ১০ মার্চ দিনের বেলা ঢাকায় এয়ারপোর্টে বড় মামার লাশ রিসিভ করতে। সেখানে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে রাত সাড়ে তিনটায় বাড়ি পৌঁছাই। এর মধ্যেই মাইকে জানানো হয়- জানাজার নামাজ কখন হবে।

ভোর থেকে গোরস্থানে করব খুঁড়া হয়। সকাল ১০টায় যখন লাশবাহী গাড়ি থেকে লাশ নামিয়ে কফিন খোলা হয়, তখন দেখা যায় লাশ আমার মামার নয়। তারপর পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে খবর নিয়ে জানতে পারে- লাশটি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির। তার নাম জালাল মিয়া।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ চৌধুরী জানান, কফিনে যার লাশ আসার কথা ছিল তার আসেনি। পরে অনেক চেষ্টা করে মরহুম জালাল উদ্দিনের ঠিকানা বের করি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ লাশ হস্তান্তর করা হবে। জালালের মরদেহ সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। তার আত্মীয় স্বজনদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সেখানে তাদের যেতে বলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

এদিকে ১৩ মার্চ দামোধরতপী গ্রামের আফছর মিয়ার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে। ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow