বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউব উদ্বোধন শনিবার, যান চলবে ২০২৩ সালে

১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ মেগা প্রকল্প, যান চলবে ফেব্রুয়ারিতে

Nov 25, 2022 - 12:52
 0
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউব উদ্বোধন শনিবার, যান চলবে ২০২৩ সালে

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে’র একটি টিউব প্রস্তুত হয়েছে। আগামীকাল শনিবার (২৬ নভেম্বর) ভোরে এটা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই লক্ষ্যে  ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

কর্ণফুলী টানেল তৈরি প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সম্পন্ন হয়েছে। ১ম টিউবের কাজের শেষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের অ্যারেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেরা কুটুম হিসেবে ভার্চুয়ারি জয়েন থেকে টিউব উদ্বোধন করবেন। একসাথে টানেলস্থলেও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রী, সংসদ মেম্বার ও‘ রাজনৈতিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনও টানেলেল পুরো কাজ সম্পন্ন হয়নি। সম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত টাইম লাগতে পারে। তারপর যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই টানেলের দুটি টিউবের অপরটির বাকি কাজও ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। সকল কাজ সম্পন্ন করে টানেল প্রস্তুত থেকে আগামী বছর জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সব নির্ভুল থাকে তাহলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে টানেল কর্তৃক যান চলাচল করতে পারবে।

দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হলো চীনের আর্থিক এবং টেকনিক্যাল সহযোগিতায়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ মেগা প্রকল্প। সম্প্রতি ঘটছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হলো প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

টানেলে নদীর তলদেশে স্থাপন করা হয়ে গিয়েছে দুইটি টিউব। একটি টিউবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প রাস্তায় গাড়ি চালানো যায়, সেটিরও কাজ চলছে। বাতি এবং পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও সমানতালে চলছে। নির্মাণ করা হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ৭৭২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। অধুনা চলছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা ভাগে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন প্রস্তুতি বাস্তবায়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম নগরীর ও পর্যটন বড় শহর কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক বদলানো আসবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারা থানা প্রান্তে সংযোগ পথের দুই পাশে এ্যাভারেজে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হলো নব মাত্রা। টানেল আরম্ভ হলে কর্ণফুলী তটিনী পাড়ি দেওয়ার জন্য সময় লাগবে মাত্র ৫ হতে ৬ মিনিট। টাইম বেঁচে যাওয়ায় অর্থনীতি গতি পাবে।

টানেল নির্মাণের আগে ২০১৩ সালে করা সমীক্ষা প্রতিবেদনে  হয়, টানেল চালুর পর এর ভেতর কর্তৃক সালের ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল কর্তৃক এ্যাভারেজে ডেইলি ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে, যাহার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি ও ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

টানেল নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়ে গিয়ে ছিল ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর ভিতরে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এই দেনা দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন এবং কনস্ট্রাকশন কোম্পানী লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের  আরও বাড়বে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে টানেলের নিরাপত্তায় নিউ করে স্ক্যানার মেশিন বসানো হচ্ছে। এইরকম কয়েকটি নতুন সংযোজন আনতে হয়েছে বলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এসব কারণে ব্যয় বেড়েই চলেছে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা।

মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। কিন্তু সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর নিম্নদেশে সুড়ঙ্গের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়ে গিয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুইটি টিউব। এর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলে টিউব দুইটা থাকলেও সংযোগ উপায় বিদ্যমান তিনটি। এর মধ্যে একটি বিকল্প রাস্তা হিসেবে প্রথম দুটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। দুই সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রথম সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ১৪ মিটার। ২য় বা মধ্যবর্তী সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৩৪ মিটার। শেষটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। প্রতিটির ব্যাস গড়ে সাড়ে চার মিটার। 

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ কর্তৃক ১৮ হতে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ প্রস্তুত করা হয়েছে। নদীর মাঝ পয়েন্টে এই গভীরতা প্রায় ১৫০ ফুট। প্রত্যেকটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত এবং ১৬ ফুট উচ্চতার। চট্টগ্রামে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্থ হতে আরম্ভ হয়ে টানেলটি নদীর তলদেশ হয়ে চলে গেছে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যবর্তী স্থানে।

২০১৬ বর্ষের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ২০১৯ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ অফিসিয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানেল প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল উশুল করবে চীনা কোম্পানি। বিগত ১৮ মে অর্থনৈতিক ব্যপার জনিত মন্ত্রিসভা কমিটির সমিতিতে এ কাজের জন্য চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানী লিমিটেডকে নিয়োগের প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow