ঋণ গ্রহণকারীদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ হাইকোর্টের

০১ ডিসেম্বর – ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঋণ মঞ্জুরের চিঠি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় প্রকাশিত রায় হতে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানা গেছে। এর প্রথমে রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের সইয়ের পর ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়।

রায়ে আদালত বলেছেন, কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে মানুষ বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করবে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঋণ মঞ্জুরের চিঠি ওই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইটে প্রকাশ করতে হবে। ব্যাংকের টাকা যেহেতু জনগণের টাকা, সেহেতু জনগণের টাকা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে, তা তাদের জানার অধিকার আছে।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কী পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ উশুল করবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার জন্য হবে স্যাংশন লেটারে। এই ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে  ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা এবং আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করবে ও নিয়মিত বিরতিতে তা দেখাশোনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনও ব্যক্তির বিপক্ষে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না বলে রায় দেন হাইকোর্ট। তবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনে উক্ত উপায়ে অর্থঋণ  মামলা করতে পারবে বলা হয় জানান আদালত।

একই সাথে বর্তমানে বিচারিক আদালতে প্রচলিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করা  চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও রায়ে  হয়।

ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তির বিপক্ষে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাদ করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক ঋণের প্রতিপক্ষে যে চেক নিচ্ছে, সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক কর্তৃক চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ একটি চুক্তির দ্বারা নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, দুষ্ট কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপচয় করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।

আদালত আরও বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এ বেআইনি কাজ করে আসছে।

রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দ্বারা বলেন, আজ হতে কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে, তাহলে বিচারালয় তা সরাসরি ভাবে পরিত্যক্ত করে দেবেন। একই সঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।

আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, অথচ তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। তা সত্ত্বেও কোনও গরিবের দেনা মওফুফ করার কথা কোনও দিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। লোন আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় ব্যর্থ হয়ে গেছে। এইজন্য সম্প্রতি থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধু অর্থঋণ  মামলা করতে পারবে। অন্য কোনও আইনে নয়।

ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের প্রতি নির্দেশও দেন আদালত। পরে রায়টি সাময়িকভাবে বন্ধ চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানায় ব্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

গত ২৮ নভেম্বর সে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে এই বিষয়ে করা আবেদন আবেদনের ওপর আজ বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেন।